মার্শাল পরিকল্পনা ছিল ট্রুম্যান নীতির অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এবং এই পরিকল্পনার মাধ্যমেই ট্রুম্যান নীতির স্বার্থতা প্রয়োগ করা হয়| মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যাহতি পরেই পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়ে উঠেছিল| ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে উৎপাদন প্রবলভাবে হ্রাস পায়|
এমনকি প্রবল শীতের জন্য ইউরোপে কয়লা উৎপাদন একরকম বন্ধ হয়ে যায়| ইংল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক কয়লা কারখানা অকেজো হয়ে যায়| মন্দা, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করে| এই শোচনীয় অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক সংকটের পথ প্রশস্ত করে|
ফ্রান্স ও ইতালিতে কমিউনিস্টদের প্রভাব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়| ফ্রান্সের প্রায় 40% শ্রমিক কমিউনিস্ট দলের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সেখানে কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীরা একটি যৌথ মন্ত্রিসভা গঠন করে|
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ নিরাপত্তা সম্পর্কে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে| মার্কিন প্রশাসনের ধারণা হয় যে, পশ্চিম ইউরোপে সাম্যবাদের প্রসার ঘটলে রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে রাশিয়া সর্বশক্তিমান হয়ে উঠবে এবং সমগ্র ইউরোপ রাশিয়ার প্রভাবাধীন অঞ্চলে পরিণত হবে| যার ফলে মার্কিন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে| এই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের অর্থ সংকটে বিপন্ন দেশগুলিতে আর্থিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে সাম্যবাদী ভাবধারা প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট হয়|
ইতিপূর্বে 1947 সালের 14 ই এপ্রিল মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র সচিব ডীন অ্যাকিসন ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনর্জীবনের জন্য মার্কিন সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছিলেন|
এরপর 1947 সালের 5 ই জুন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ মার্শাল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাষণে ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে মার্কিন নীতি বিশেষভাবে ব্যাখ্যা করেন| তিনি ঘোষণা করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কোন বিশেষ দেশ বা মতাদর্শে বিরুদ্ধে নয়| এই নীতি সার্বিকভাবে ক্ষুব্ধ-দারিদ্র, হতাশা ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে| এর লক্ষ্য হবে, বিশ্বে এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থাপন করা, যার দ্বারা স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলির অস্তিত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে|
মার্শাল তার ভাষণে সামরিক, অর্থনৈতিক সহায়তা কর্মসূচির পরিবর্তে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অখন্ডতার প্রস্তাব পেশ করেন| তিনি তার প্রস্তাবে আরো বলেন যে, যেসব রাজনৈতিক দল মানুষের সমস্যা বজায় রেখে রাজনৈতিক ও অন্যান্য সুবিধা লোভের উদ্যোগ নেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিরোধিতা করবে|
এই ব্যাপারে আলোচনার জন্য 1947 সালের জুন মাসে প্যারিসে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের এক সভা বসে| রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ পূর্বশর্ত মেনে নিয়ে এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিরোধী ছিলেন| তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সাহায্যকারী রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হবে| স্বদেশে ফিরে তিনি মার্শাল পরিকল্পনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন|
অবশেষে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, তুরস্ক ও পশ্চিম জার্মানি সহ পশ্চিম ইউরোপের 16 টি দেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং এই দেশগুলি একত্রিত হয়ে "ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা"(EEC) গঠন করেন| 1947 সালে মার্কিন কংগ্রেস এক আইন পাস করে "ইউরোপীয় পুনঃজীবন পরিকল্পনা" গ্রহণ করে| এই আইন অনুসারে 1948-52 সাল পর্যন্ত এই চার বছরের জন্য এক হাজার দুই শত কোটি ডলার মঞ্জুর করে|
অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এই পরিকল্পনার কোন সম্পর্ক ছিল না| তাই রাশিয়ার "কমিউনিস্ট ইকোনমিক ইউনিয়ন" নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির পূনর্গঠনের জন্য এক প্রস্তাব ঘোষণা করেন|
এমনকি প্রবল শীতের জন্য ইউরোপে কয়লা উৎপাদন একরকম বন্ধ হয়ে যায়| ইংল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক কয়লা কারখানা অকেজো হয়ে যায়| মন্দা, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করে| এই শোচনীয় অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক সংকটের পথ প্রশস্ত করে|
ফ্রান্স ও ইতালিতে কমিউনিস্টদের প্রভাব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়| ফ্রান্সের প্রায় 40% শ্রমিক কমিউনিস্ট দলের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সেখানে কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীরা একটি যৌথ মন্ত্রিসভা গঠন করে|
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ নিরাপত্তা সম্পর্কে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে| মার্কিন প্রশাসনের ধারণা হয় যে, পশ্চিম ইউরোপে সাম্যবাদের প্রসার ঘটলে রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে রাশিয়া সর্বশক্তিমান হয়ে উঠবে এবং সমগ্র ইউরোপ রাশিয়ার প্রভাবাধীন অঞ্চলে পরিণত হবে| যার ফলে মার্কিন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে| এই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের অর্থ সংকটে বিপন্ন দেশগুলিতে আর্থিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে সাম্যবাদী ভাবধারা প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট হয়|
ইতিপূর্বে 1947 সালের 14 ই এপ্রিল মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র সচিব ডীন অ্যাকিসন ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনর্জীবনের জন্য মার্কিন সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছিলেন|
এরপর 1947 সালের 5 ই জুন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ মার্শাল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাষণে ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে মার্কিন নীতি বিশেষভাবে ব্যাখ্যা করেন| তিনি ঘোষণা করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কোন বিশেষ দেশ বা মতাদর্শে বিরুদ্ধে নয়| এই নীতি সার্বিকভাবে ক্ষুব্ধ-দারিদ্র, হতাশা ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে| এর লক্ষ্য হবে, বিশ্বে এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থাপন করা, যার দ্বারা স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলির অস্তিত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে|
মার্শাল তার ভাষণে সামরিক, অর্থনৈতিক সহায়তা কর্মসূচির পরিবর্তে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অখন্ডতার প্রস্তাব পেশ করেন| তিনি তার প্রস্তাবে আরো বলেন যে, যেসব রাজনৈতিক দল মানুষের সমস্যা বজায় রেখে রাজনৈতিক ও অন্যান্য সুবিধা লোভের উদ্যোগ নেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিরোধিতা করবে|
এই ব্যাপারে আলোচনার জন্য 1947 সালের জুন মাসে প্যারিসে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের এক সভা বসে| রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ পূর্বশর্ত মেনে নিয়ে এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিরোধী ছিলেন| তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সাহায্যকারী রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হবে| স্বদেশে ফিরে তিনি মার্শাল পরিকল্পনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন|
অবশেষে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, তুরস্ক ও পশ্চিম জার্মানি সহ পশ্চিম ইউরোপের 16 টি দেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং এই দেশগুলি একত্রিত হয়ে "ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা"(EEC) গঠন করেন| 1947 সালে মার্কিন কংগ্রেস এক আইন পাস করে "ইউরোপীয় পুনঃজীবন পরিকল্পনা" গ্রহণ করে| এই আইন অনুসারে 1948-52 সাল পর্যন্ত এই চার বছরের জন্য এক হাজার দুই শত কোটি ডলার মঞ্জুর করে|
অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এই পরিকল্পনার কোন সম্পর্ক ছিল না| তাই রাশিয়ার "কমিউনিস্ট ইকোনমিক ইউনিয়ন" নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির পূনর্গঠনের জন্য এক প্রস্তাব ঘোষণা করেন|
মার্শাল পরিকল্পনার গুরুত্ব
মার্শাল পরিকল্পনা অথবা মার্শাল প্ল্যান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে সফল হয়| এই পরিকল্পনার ফলে,
প্রথমত,- ইউরোপীয় অর্থনৈতিক জীবনে মন্দাভাব কেটে যায় এবং ইউরোপের উৎপাদনের মাত্রা 25% বৃদ্ধি পায়| ফ্রান্সের মুদ্রাস্ফীতি পরিণত হয়| ইউরোপের কৃষি উৎপাদন 16% বৃদ্ধি পায়| এক কথায় পশ্চিম ইউরোপে তার আর্থিক স্বয়ম্ভরতা লাভ করে| অন্যদিকে এর ফলে মার্কিন অর্থনীতিও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে| আটলান্টিক মহাসাগরের উভয়তীরে দেশগুলির মধ্যে মার্কিন আর্থিক যোগসূত্র ঘনিষ্ঠতর হয়| আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার প্রধানতম বিনিময়ের মুদ্রার স্থান অর্জন করে|
দ্বিতীয়ত,- রাজনৈতিক দিক থেকে পশ্চিম ইউরোপের ভারসাম্য সুনিশ্চিত হয়| সাম্যবাদী অভ্যুত্থানের আশঙ্কা থেকে ইতালি ও ফ্রান্স মুক্তি পায়|
পরিশেষে বলা যায়, মার্শাল পরিকল্পনা তার উদ্দেশ্য পূরণে সফল হলেও এই পরিকল্পনার ফলে ইউরোপীয় মহাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনীতি দুটি বিবদমান শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা লড়াই এর রাজনীতির মাত্রা ঘনীভূত হয়|
দ্বিতীয়ত,- রাজনৈতিক দিক থেকে পশ্চিম ইউরোপের ভারসাম্য সুনিশ্চিত হয়| সাম্যবাদী অভ্যুত্থানের আশঙ্কা থেকে ইতালি ও ফ্রান্স মুক্তি পায়|
পরিশেষে বলা যায়, মার্শাল পরিকল্পনা তার উদ্দেশ্য পূরণে সফল হলেও এই পরিকল্পনার ফলে ইউরোপীয় মহাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনীতি দুটি বিবদমান শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা লড়াই এর রাজনীতির মাত্রা ঘনীভূত হয়|
তথ্যসূত্র
- Pavneet Singh, "International Relations ".
- Prakash Chandra, "international relations & comparative politics".
- Garrett W Brown, "The Concise Oxford Dictionary of Politics and International Relations ".
সম্পর্কিত বিষয়
- ওপেক কি ? | What is OPEC ? (আরো পড়ুন)
- সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (আরো পড়ুন)
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................