ভারতীয় চিত্রকলার ইতিহাসে পাল যুগের চিত্রকলার একটি বিশেষ স্থান আছে| এই যুগের দুই বরেন্দ্রবাসী শিল্পী ধীমান ও তাঁর পুত্র বিটপালের নাম উল্লেখ রয়েছে| তিব্বতি ঐতিহাসিক লামা তারনাথ লিখেছেন যে, পিতা ও পুত্র উভয়ই তখন ধাতব মূর্তি শিল্পে এবং চিত্র শিল্পের একটি বিশিষ্ট শিল্প গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন|
নালন্দার একটি মন্দিরের অভ্যন্তরে দেওয়ালের গাত্রে পাল যুগের শিল্পকলা কিছু নিদর্শন আজও বিদ্যমান| তবে পাল চিত্রকলার প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় সেই যুগের চিত্র সংযুক্ত পুঁথিতে|
তাল পাতায় অথবা কাগজে হাতের লেখা পুঁথির শোভা বর্ধক ও অলংকার করণের উদ্দেশ্যে এই চিত্রগুলি অঙ্কিত| অবশ্য পুঁথি চিত্রগুলির সঙ্গে পুঁথির বিষয়বস্তুর কোন সম্পর্ক নেই| চিত্রগুলি সচেতন হলেও কিন্তু চরিত্রে ব্যাপক| বিষয়বস্তু ও গুণগত সৌন্দর্যের অতীব সমৃদ্ধ এই চিত্রগুলি|
চিত্র সম্বলিত এই পুঁথিগুলির অধিকাংশই পাওয়া গেছে নেপালে, কিছু বঙ্গদেশে ও বিহারে| দশম থেকে দ্বাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত- এই সময়ের মধ্যে এগুলির লিখিত ও চিত্রিত হয়| মোট চিত্রাবলীর সংখ্যা 400 এর কাছাকাছি| পুঁথিগুলি প্রায় সবগুলি বৌদ্ধধর্ম সমন্বয়ী|
পুঁথিগুলিতে চিত্রিত হয়েছে বুদ্ধদেব ও বিভিন্ন বৌদ্ধ দেব-দেবী| চিত্রিত দেবদেবীর মধ্যে আছে মৈত্রীয়, মহাকাল, বজ্রপানি, তারা, মহাপ্রতিসরা, কুরুকুল্লা, চুন্ডা, বজ্রস্বত্ব, মোঞ্জ ঘোষ প্রভৃতি|
এই চিত্রগুলিতে চিত্রকরেরা সাদা, হলুদ, নীল, লাল, সবুজ এবং কাল প্রদীপের শিখার কাল্যি রং এর ব্যবহার করত| এই চিত্রগুলি পাল পর্বের বৌদ্ধ দের-দেবীর পরিচয় জানতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি পূর্ব ভারতের বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আলোকপাত করে|
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
সম্পর্কিত বিষয়
- নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় টীকা (আরো পড়ুন)
- বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................