সুলতানি আমলের প্রখ্যাত লেখক ছিলেন আমির খসরু| এক অভিবাসী তুর্কি পরিবারে 1253 খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের পাতিয়ালিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন| সভাকবি হিসাবে তিনি দিল্লি দরবারে 1290 থেকে আমৃত্যু(1325) পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন| অর্থাৎ সুলতান জালালউদ্দিন খলজি থেকে মহম্মদ বিন তুঘলক পর্যন্ত তিনি দরবারে ঘটনাবলীর সাথে জড়িত ছিলেন|
খসরুর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল- "খাজাইন-উল-ফুতুহ", "তুঘলকনামা", নুসিপিহর ইত্যাদি| এর মধ্যে খাজাইন-উল-ফুতুহ গ্রন্থটি ইতিহাস গত উপাদানে সমৃদ্ধ| এই গ্রন্থে আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য বিজয় ও তার প্রশাসনিক সংস্কার এবং মোঙ্গল আক্রমণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে|
আবার তুঘলকনামা গ্রন্থে তিনি সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এর সিংহাসন দখলের প্রেক্ষাপট ও রাজ্যাভীষেকের বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে| খসরুর নুসিপিহর-এ আলাউদ্দিনের পুত্র মোবারক খলজির রাজত্বকাল বর্ণিত আছে| এছাড়া আনিকা বা মসনবী নামক কবিতাগুলি ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি|
অধ্যাপক পিটার হাডি এর মতে, তাঁর যোগ ছিল সুলতানি দরবারে সাথে| তাই পৃষ্ঠপোষক শাসক, অভিজাতদের সন্তোষ বিধানের জন্য তিনি কাব্যচর্চা করেছেন, সেখানে ঐতিহাসিকের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাওয়া যায় না| তাঁর যোগ ছিল কেবল বর্তমানের সাথে এবং অতীতের ঘটনাবলীকে বর্তমানে কষ্টিপাথরে যাচাই করে ভবিষ্যতে রূপরেখা অঙ্কনের কোন চেষ্টা তিনি করেননি|
তবে একথা সত্য যে, তিনি ছিলেন মূলত কবি| তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ঘটনা গোপন করেননি বা মিথ্যা বলেননি| শুধু অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে গেছেন মাত্র| তিনি অনেক নতুন তথ্য সরবরাহ করেছেন, যা তার যুগকে অনেকাংশে আলোকিত করেছে|
ঐতিহাসিকের কাজ যদি হয় অতীতকে আলোকিত করা এবং অতীত সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করা, তাহলে তাঁর খাজাইন-উল-ফুতুহ, তুঘলকনামা প্রভৃতি গ্রন্থগুলি সেই উদ্দেশ্য সাধন করেছে| তাই বলা যায় আমির খসরু শুধু কবি নন, একজন যোগ্য ঐতিহাসিক|
ঐতিহাসিকের কাজ যদি হয় অতীতকে আলোকিত করা এবং অতীত সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করা, তাহলে তাঁর খাজাইন-উল-ফুতুহ, তুঘলকনামা প্রভৃতি গ্রন্থগুলি সেই উদ্দেশ্য সাধন করেছে| তাই বলা যায় আমির খসরু শুধু কবি নন, একজন যোগ্য ঐতিহাসিক|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India".
- Satosj Cjamdra, "Medieval India".
সম্পর্কিত বিষয়
- ইউরোপের দাস প্রথার ইতিহাস (আরো পড়ুন)
- দাস ব্যবসা এবং ইউরোপের উপর তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................