ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পরবর্তীকালে তুর্কি অভিজাতদের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দিল্লি সুলতানি রাজ্য নিঃসন্দেহে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তখন একজন কোঠর ব্যক্তি শাসকের এরকম পরিস্থিতিতে সুলতান বলবনের সিংহাসন আরোহন ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
কৃতিত্বের দিক থেকে বিচার করলে তাঁকে দিল্লি সুলতানি যুগের অন্যতম প্রধান শাসক বলা যেতে পারে। বহু বছর সিংহাসনে তিনি সুদৃঢ় প্রতিষ্টিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কৃতিত্বের দিক থেকে বিচার করলে তাঁকে দিল্লি সুলতানি যুগের অন্যতম প্রধান শাসক বলা যেতে পারে। বহু বছর সিংহাসনে তিনি সুদৃঢ় প্রতিষ্টিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বলবন চেয়েছিলেন রাজতন্ত্রকে একটি মহৎ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে এবং তার আদর্শের মূল ভিত্তি ছিল পারসিক রাজতন্ত্রের আদর্শ। যেমন বলা যেতে পারে-
রাজনৈতিক আদর্শ- বলবন মনে করতেন, রাজা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতিনিধি। তার মতে, সুলতানদের ক্ষমতার উৎস ছিল ঈশ্বর। তুর্কি অভিজাত বা জনসাধারণের সমিতির উপরে রাজতন্ত্র নির্ভরশীল নয়। রাজার উৎস বা ক্ষমতা নিয়ে মতাদর্শ ছিল যে, মানবজাতির মধ্যে তার সমকক্ষ কেউ নেই।
রাজকীয় আরম্ভর- বলবন সুলতানদের বাহ্যিক আরম্ভর ও মর্যাদার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন। তিনি সর্বদা জনগণ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেন এবং সাধারণ মানুষের মনে সুলতানদের কথাবার্তা তিনি মর্যাদাহানির বলে মনে করতেন। এমনকি দরবারে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউই কথা বলতে পারতো না।
দরবারী মর্যাদা- তিনি মানুষের বংশগত ব্যাপারে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ মেনে চলতেন। তিনি রাজার দৈহিক পবিত্রতায় বিশ্বাসী ছিলেন। উপযুক্ত রাজ পোশাক ও তরবারি ছাড়া তিনি কখনো দরবারে প্রবেশ করতেন না।
পারসিক আদব-কায়দা- তাঁর মতে স্বৈরাচারী রাজক্ষমতা রাজ্যের সংহতির একটিমাত্র উৎস। এই কারণে বলবন তাঁর দরবারে কয়েকটি অবশ্যই পালনীয় পারসিক আদব-কায়দা প্রবর্তন করেন, এগুলি হলো সিজদা ও পাইবস। সিজদা হলো সুলতান সিংহাসন আরোহনের সময় নতকানু হওয়া। পাইবস হলো সিংহাসন পদচুম্বন করা। এগুলি ইসলাম বিরোধী কাজ হওয়া সত্ত্বেও তিনি জোরপূর্বক এই কাজ করাতেন। তিনি বিভিন্ন স্তরের রাজ কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাকের নির্দেশ দেন।
ন্যায় বিচার- প্রজাবর্গের প্রতি ন্যায়ে বিচার করা ছিল তার প্রধান পালনীয় কর্তব্য। সাধারণ মানুষের প্রতি যেকোনো ধরনের ন্যায়ে বিচার বলবনের মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার করত। ঐতিহাসিক আর. পি. ত্রিপাঠি ও নিজামী মনে করতেন, এই রাজ আদর্শ প্রচারের পেছনে বলবনের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও তা থেকে উত্তরণের একান্ত ইচ্ছা কাজ করেছিল।
তবে বলবনের দাসত্ব যুক্তি সম্পর্কে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ঐতিহাসিক বারুণী লিখেছেন যে, সাধারণ থেকে ন্যায়ে বিচার চেষ্টা করলেও ব্যক্তিগত স্বার্থ বিতাড়িত ছিল।
ন্যায় বিচার- প্রজাবর্গের প্রতি ন্যায়ে বিচার করা ছিল তার প্রধান পালনীয় কর্তব্য। সাধারণ মানুষের প্রতি যেকোনো ধরনের ন্যায়ে বিচার বলবনের মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার করত। ঐতিহাসিক আর. পি. ত্রিপাঠি ও নিজামী মনে করতেন, এই রাজ আদর্শ প্রচারের পেছনে বলবনের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও তা থেকে উত্তরণের একান্ত ইচ্ছা কাজ করেছিল।
তবে বলবনের দাসত্ব যুক্তি সম্পর্কে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ঐতিহাসিক বারুণী লিখেছেন যে, সাধারণ থেকে ন্যায়ে বিচার চেষ্টা করলেও ব্যক্তিগত স্বার্থ বিতাড়িত ছিল।
তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ী, "মধ্যকালীন ভারত"
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার (আরো পড়ুন)
- দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যায় (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................