দিল্লি সুলতানি যুগে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ব্যক্তি ছিলেন স্বয়ং সুলতান। মুসলিম আইন অনুসারে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সাময়িকভাবে বেশ কিছু উচ্চপদস্থ লোকেরা ভোগ করতেন। কাজেই সুলতান নির্ধারণের ক্ষেত্রে কয়েকজন প্রভাবশালী আমীর ওমরাহ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তবে সুলতান মনোনয়ন অনুযায়ী পরবর্তী সুলতান নিযুক্ত হন।
সুলতানি যুগের শাসন প্রকৃতি তত্ত্বগত ভাবে স্বৈরাচারী মনে হলেও সুলতানদের কয়েকটি নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে কাজ করতে হতো। তৎকালীন প্রয়োজনে সরকার সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করতেন। অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন শাসকের আমলে সুলতানি শাসন ভেঙে পড়েছিল। পাশাপাশি কয়েকজন তাদের যোগ্যতা স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
যাইহোক ঐতিহাসিক এলফিনস্টোন প্রমূখরা বলেছেন- সুলতানি যুগের শেষের দিকের শাসনকালকে আকবরের পূর্বে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় বলে অভিহিত করা যায়।
![]() |
কুরআন |
রাজার আদেশ
সুলতানি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক আদর্শ ছিল ইসলামীও ভিত্তিতে। তারা ছিলেন ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতার বিশ্বাসী। ঈশ্বরের বিধান অর্থাৎ কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যশাসন তার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করতেন। সুলতান ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান। আলাউদ্দিন খলজী ও মুহাম্মদ বিন তুঘলক ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাজ্য শাসন করতেন, কারণ তাদের অনুকূলে বিশাল সৈন্যবাহিনী সমর্থন ছিল।কেন্দ্রীয় শাসনের প্রকৃতি
প্রথমদিকে সুলতানি রাষ্ট্রের সামরিক শাসনের শাসিত খলিফাদের নিয়ম আদেশ অনুযায়ী "মুজলিস-ই-আলিয়া" নামে একটি পরামর্শদাতা সমিতি গঠন করেন। জরুরী কালীন সময়ে সুলতান এই অধিবেশনে অভিজাতদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সুলতান ছিলেন সর্বশক্তিমান। তিনি ছিলেন একাধারে প্রধান শাসনকর্তা, আবার অন্যদিকে ছিলেন বিচারপতি, সেনাপতি, প্রধান আইনপ্রণেতা ও ধনরক্ষক।কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগ
সুলতানি যুগে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে নানা বিভাগের হাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল। এই শাসনের উজীররা রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতেন।সুলতানের অসুস্থ অবস্থায়, তথা সুলতান যদি নাবালক থাকতেন তাহলে উজীররা দায়িত্ব পরিচালনা করতেন।১. দেওয়ান-ই-আজ
দেওয়ান-ই-আজ ছিলেন সামরিক বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তাদের প্রধান কাজ ছিল- সৈন্য নিয়োগ ও তাদের বিবরণ সহ বার্ষিক তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ করা। তার অনুমোদন ক্রমে সৈন্যদের বেতন প্রদান প্রভৃতি কাজ কর্ম সম্পাদন হতো।২. দেওয়ান-ই-রাসালাৎ
এই মন্ত্রীরা ধর্মনীতি ও জনকল্যাণমূলক কাজে দায়িত্ব পালন করতেন। আবার অধ্যাপক কুরেশি বলেছেন, এই মন্ত্রীদের নির্দিষ্ট হারে বেতন প্রদান করা হতো। আবার অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ মনে করেন যে, এই বিভাগ কূটনৈতিক দপ্তর পরিচালনা করতেন।৩. দেওয়ান-ই-ইনসা
এই বিভাগ ছিল রাষ্ট্রীয় সব বিভাগের দায়িত্ব কর্তা। রাষ্ট্রের গোপনীয়তা বজায় রাখা ছিল এই দপ্তরের প্রধান কাজ।৪. আজ-ই-মামালিক
এই বিভাগের কাজ ছিল প্রদেশ থেকে কেন্দ্রতে সংবাদ পৌঁছানো এবং প্রদেশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের সবরকম কাজের তদারকি করা।সুলতানি যুগের শাসন প্রকৃতি তত্ত্বগত ভাবে স্বৈরাচারী মনে হলেও সুলতানদের কয়েকটি নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে কাজ করতে হতো। তৎকালীন প্রয়োজনে সরকার সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করতেন। অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন শাসকের আমলে সুলতানি শাসন ভেঙে পড়েছিল। পাশাপাশি কয়েকজন তাদের যোগ্যতা স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
যাইহোক ঐতিহাসিক এলফিনস্টোন প্রমূখরা বলেছেন- সুলতানি যুগের শেষের দিকের শাসনকালকে আকবরের পূর্বে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় বলে অভিহিত করা যায়।
তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ী, "মধ্যকালীন ভারত"
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার (আরো পড়ুন)
- দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যায় (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................