সুলতানি সাম্রাজ্যের গড়ে উঠেছিল যুদ্ধের মাধ্যমে এবং তার স্থায়িত্ব নির্ভরশীল ছিল সাময়িক ভূমিকার উপর।তাই সুলতানি আমলে প্রশাসনের প্রচুর অর্থ ব্যবহৃত হতো। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল সুলতান ও অভিজাতদের ব্যক্তিগত উচ্চাশা। স্বভাবতই সুলতানি পর্বে সরকারি আয়ের মূল উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব ও ব্যক্তিগত কিছু কর।
শরীয়ত অনুসারে শাসকশ্রেণী চার প্রকার কর আদায় করতো, যেমন- খারাজ, ডাকাত, খামোশ ও জিজিয়া। সুলতানি আমলে প্রধানত এরই ভিত্তিতে কর আদায় করা হতো। আবার এরই বাইরে কিছু কিছু অতিরিক্ত কর আদায় করা হতো।
খারাজ বা ভূমি রাজস্ব রাজকোষের আয়ের প্রধান উৎস ছিল। প্রথমে এটি কেবলমাত্র হিন্দু প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করা হতো। এর কারণ ছিল, সুলতানি শাসনের সূচনার পর্বে মূলত হিন্দুরাই চাষাবাদের সাথে যুক্ত ছিল, পরে মুসলিমরাও কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত হলে এই করের অন্তর্ভুক্ত হয় পরে। আগের মত এই যুগের জমির প্রকৃত মালিকানা ছিল সুলতানের হাতে।
ডাকাত হলো এক প্রকার ধর্মীয় ও সেবামূলক কর, যা মূলত মুসলমানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হতো। অধ্যাপক এ. বি. পান্ডের মতে, তিনভাবে এই কর আদায় করা হতো, যথা-
- সম্পদের অধিকারী ও উপার্জন নির্ভরশীল মুসলমানেরা মোট আয়ের দুই থেকে আড়াই শতাংশ দরিদ্র মুসলমানদের সেবার জন্য রাষ্ট্রকে প্রদান করতেন।
- ব্যক্তিগত জমির ভোগ দখল কারীগণ উৎপন্ন শস্যের একাংশ ভূমিকর হিসাবে দিতেন।
- বাণিজ্যরত মুসলমানদের বাণিজ্যের আয় থেকে আড়াই শতাংশ হারে কর দিতে হতো।
জিজিয়া কর অমুসলমানদের উপর ধার্য করা হতো। এটি ছিল এক প্রকার ধর্মকর। মুসলিম রাষ্ট্রের বসবাসকারী অমুসলমানদের জীবন, সম্পত্তি ও ধর্মীয় স্থানে নিরাপত্তার জন্য এই কর দেওয়া হতো। অবশ্য অনেকে আবার এই জিজিয়া কর থেকে মুক্তি পেতেন, যেমন- মহিলা, শিশু, ভিক্ষুক, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, সাধু-সন্ন্যাসী, ব্রাহ্মণ এবং যাদের কোন আয় নেই এমন লোকদের জিজিয়া দিতে হতো না। অধ্যাপক রোমিলা থাপার মনে করেন, "শহরের উচ্চ আয় সম্পূর্ণ মানুষদের কেবল জিয়ার দিতে হতো। গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের সম্ভবত এই কর বহন করার ক্ষেত্রে ততটা কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হত না"।
খনিজ আয় বা যুদ্ধের লুণ্ঠিত দ্রব্যের ভাগ হিসেবে আদায় করা হতো খামোশ। ইসলামী আইন অনুসারে রাস্ট্র এক-পঞ্চমাংশ হারে খামোশ আদায়ের অধিকার ছিল। যদিও সুলতানেরা এই আইনে অনেকক্ষেত্রে ভঙ্গ করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে উল্লেখিত যে, সিকন্দর রবি এই কর কোনদিনও আদায় করেননি।
উপরন্তু কারণসমূহ ছাড়াও সুলতানি আমলে বিভিন্ন সময়ে নানারকম কর আদায় করা হতো। যেমন- ফিরোজ শাহ তুঘলক সেচযুক্ত এলাকায় 10% হারে সেচকর আদায় করতেন। আবার আলাউদ্দিন খলজী গৃহকর এবং পশুচারণ কর আদায় করতেন। উত্তরাধিকারী বিহীন কোন মুসলমানের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি রাষ্ট্রের সম্পত্তি হিসাবে অধিকৃত হয়। এই নীতিটাও বিভিন্ন প্রাদেশিক শাসক এবং অনুগত সামন্তদের কাছ থেকেও উপঢৌকন হিসেবে কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা হতো।
তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ী, "মধ্যকালীন ভারত"
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার (আরো পড়ুন)
- দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যায় (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................