বিভিন্ন ইতিহাসে অসংখ্য নৃপতিদের মধ্যে একমাত্র ছিলেন উজ্জল ও ব্যতিক্রমী প্রিয়দর্শী অশোক। মানব ধর্মের প্রচার এবং অহিংসা নীতির পূজারী মধ্যে অশোক বিশ্ব ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আসেন। কলহনের রাজতরঙ্গিনী থেকে জানা যায় যে, কলিঙ্গ যুদ্ধের সময় পর্যন্ত অশোক শৈব ধর্মের অনুরাগী ছিলেন।
কিন্তু কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা, আত্মবেদনা, দুঃখ- তাঁর মানবিক পরিবর্তন ঘটায় এবং শান্তির জন্য উপগুপ্ত নামক এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কাছ থেকে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। অশোক ধর্মের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা জ্ঞাপন করেন। এমনকি বৌদ্ধ সঙ্গে মতভেদ দেখা দিলে তা দূর করার জন্য পাটলিপুত্ররে বৌদ্ধ সম্মেলনের আহ্বান করেন, সুতরাং তাঁর বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার বিষয়টি বিতরকের ঊর্ধ্বে।
Title- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য
Author-आशीष भटनागर
Date-6 December 2009
Source- wikipedia (check here)
Modified- colour and background
License- creative Commons
|
অশোকের ধর্মের বৈশিষ্ট্য
অশোকের বিভিন্ন শিলালেখ থেকে তাঁর ধম্ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করা যায়। অশোকের শাসকি লেখতে ধম্ম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। অশোক তাঁর ধম্মের যা সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা থেকে বোঝা যায় যে- ধম্ম ছিল তাঁর কাছে কতগুলি নৈতিক কর্তব্যের সমষ্টি মাত্র।
দ্বিতীয় ও সপ্তম শিলালেখ হতে তাঁর ধম্মের অন্তর্নিহিত গুণাবলী বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন-
- দয়ে (দয়া)
- দানে (দান)
- হতে (সত্য)
- সচত্র (সূচী)
- মাদয়ে (ভদ্রতা)
- বহু পয়ানে (অনেক সৎ কাজ)
এই লেখতে তিনি আরও বলেছেন যে- তিনি জানান এই গুনগুলি লোক সমাজে বৃদ্ধি ঘটুক।
অশোকের ধর্মের অন্যতম প্রধান ভিত্তি ছিল অহিংসা। যাইহোক অশোক বলেছেন- তাঁর ধম্ম গ্রহণ যারা করবেন, তাদের কয়েকটি নীতি বা পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যথা-
- অভিহিষ ভূতানাম (জীবিত প্রাণীর ক্ষতি না করা)
- অনালম্ব প্রনায়ম (প্রাণীর হত্যা থেকে বিরত থাকা)
- ইতরি মাতরি শশ্রুষা (পিতা মাতার প্রতি শ্রদ্ধা)
- অপবেয়তা অপভন্ডতা (অল্প ব্যয় এবং অল্প সঞ্চয়)
সপ্তম স্তম্ভ লেখতে কয়েকটি সামাজিক নীতি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, এইগুলো হল-
- জীবে হিংসা না করা।
- নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করে অপরে ধর্মকে নিচু চোখে না দেখা।
- মনের সংকীর্ণতা দূর করা।
- অপর সম্প্রদায়ের ধর্ম শাস্ত্রগুলি পাঠ করা।
অশোকের ধর্ম প্রচার
বৌদ্ধ ধর্মের প্রেম ও অহিংসার বাণী অশোক বিশ্বজগতের ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন- জগতের মঙ্গলের অধিক বড় কোন কাজ নেই, আমরা সামান্য প্রচেষ্টায় তারা জীবজগতকে আনন্দিত রাখবো। এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অশোক ধর্ম প্রচার জন্য দুটি নীতি গ্রহণ করেন-
- ব্যক্তিগত উদ্যোগ।
- ধর্ম প্রচারের জন্য বিভিন্ন কর্মচারী নিয়োগ।
কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক যুদ্ধ বিজয়ের পরিবর্তে ধর্ম বিজয়ের নীতি গ্রহণ করেন। তিনি যেখানেই যেতেন সেখানে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসতেন এবং তাদের সাথে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতেন। অশোক সত্যিকার অর্থে বুঝেছিলেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে একাজে সাফল্য পাবেন না, তাই তিনি বিভিন্ন কর্মচারীদের নিয়োগ করেছিলেন। ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি লাজুক, যুত, ধর্ম মহাপাত্র প্রভৃতি কর্মচারী নিয়োগ করেন। এদের দ্বারা তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে চারিপাশে ছড়িয়ে দেন।
বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ, অশোকের ধর্ম প্রচার- তাঁর কর্মসূচীর অন্তর্গত ছিল। মানুষ যাতে ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করে, সেই উদ্দেশ্যে তিনি এই কাজ করেছিলেন। তাছাড়া কূপ খনন, বৃক্ষরোপন, বিশ্রামাগার প্রভৃতি বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারের জন্য অশোক দেশ-বিদেশে কর্মচারী পাঠিয়ে ছিলেন।
নানাভাবে ধর্মের প্রচার ঘটানোর জন্য অশোক যে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন, তা তর্কাতীত নয়। ধর্ম প্রচারে যে ফল ভাল হয়েছিল, তা অশোক নিজেই বলেছেন তার সপ্তম শিলালেখতে। কিন্তু অশোক বর্ণিত ধম্ম সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়, তাই অধ্যাপক রোমিলা থাপার বলেছেন- "সবকিছু চেষ্টা সত্ত্বেও ধম্ম নীতি সফল হলো না। সামাজিক উত্তেজনা ও ভেদাভেদ রয়ে গেল। গোষ্ঠীগত বিরোধ বেড়েই চলল"। বস্তুত সমস্যাগুলি প্রকৃত সমাধান যদি ধম্ম প্রচারের মধ্যে দিয়েই হয়েই যেত, তাহলে অশোকের মৃত্যুর পর মৌর্য্য সাম্রাজ্যের দ্রুত পতন হতো না।
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
সম্পর্কিত বিষয়
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)
- বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................