বৈদিক সাহিত্যে রাজতন্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে যে কাহিনী আছে, তা থেকে জানা যায় যে- দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধে দেবতাদের পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা দিলে তারা নিজেরাই একত্র ফলে জয় হয় দেবতাদেরই। এরকম আরো প্রচলিত কাহিনী থেকে রাজা সম্পর্কিত ধারণার উৎপত্তি সূত্র পাওয়া যায়। কিন্তু ক্রমশ প্রতিরক্ষার প্রয়োজন বাড়লে গোষ্ঠীর মধ্যে যিনি সবচেয়ে যুদ্ধে পটু ও প্রতিরক্ষা, তাকে গোষ্ঠীর নেতা নির্বাচিত করা হয়। ক্রমে ক্রমে নেতারা রাজাদের মতো বিভিন্ন অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করলেন।
ধীরে ধীরে রাজার মধ্যে ভগবান প্রদত্ত কিছু গুণ আছে বলে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল। রাজার উপরে এই দেবত্ব আরোপের ফলে রাজার ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ক্রমশ বাড়তে থাকল এবং রাজা বংশানুক্রমিকভাবে রাজপদের অধিকারী হতে থাকলেন। এইভাবে বৈদিক যুগের গোষ্ঠীর প্রধানের ক্রমে রাজায় রূপান্তরিত হলেন এবং এদেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঋক বৈদিক যুগে রাষ্ট্রপ্রধান রাজার শাসনাধীন ছিল- এই ছিল প্রচলিত রীতি। রাজ্যগুলি তাই সাধারণভাবে আকারে ক্ষুদ্র ছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্যই এর ব্যতিক্রম দেখা যেত। রাজতন্ত্র সাধারণত বংশানুক্রমিক ছিল। ঋকবেদে নির্বাচিত রাজতন্ত্রের কোনো উল্লেখ নেই, কিন্তু অথর্ববেদে আছে। তবে রাজার সার্বভৌম অধিকার দৃঢ় ও স্থায়ী হতে হলে যে জনসমর্থনের প্রয়োজন- এমন উল্লেখ ঋকবেদে আছে। সেখানে বিশ্বজনীন রাষ্ট্রের ধারণা ও সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল না, সম্রাট যে বিশ্ব ভবনের রাজা, সেই আকাঙ্ক্ষাই উচ্চারিত হতো।
উপজাতি ও তার সম্পত্তিকে রক্ষা করার রাজার সব থেকে বড় দায়িত্ব ছিল। তাকে বহিঃশত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে হতো। জনসাধারণের আচরণ লক্ষ্য করার জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করতেন এবং অপরদিকে শাস্তি দিতেন।
ধীরে ধীরে রাজার মধ্যে ভগবান প্রদত্ত কিছু গুণ আছে বলে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল। রাজার উপরে এই দেবত্ব আরোপের ফলে রাজার ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ক্রমশ বাড়তে থাকল এবং রাজা বংশানুক্রমিকভাবে রাজপদের অধিকারী হতে থাকলেন। এইভাবে বৈদিক যুগের গোষ্ঠীর প্রধানের ক্রমে রাজায় রূপান্তরিত হলেন এবং এদেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঋক বৈদিক যুগে রাষ্ট্রপ্রধান রাজার শাসনাধীন ছিল- এই ছিল প্রচলিত রীতি। রাজ্যগুলি তাই সাধারণভাবে আকারে ক্ষুদ্র ছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্যই এর ব্যতিক্রম দেখা যেত। রাজতন্ত্র সাধারণত বংশানুক্রমিক ছিল। ঋকবেদে নির্বাচিত রাজতন্ত্রের কোনো উল্লেখ নেই, কিন্তু অথর্ববেদে আছে। তবে রাজার সার্বভৌম অধিকার দৃঢ় ও স্থায়ী হতে হলে যে জনসমর্থনের প্রয়োজন- এমন উল্লেখ ঋকবেদে আছে। সেখানে বিশ্বজনীন রাষ্ট্রের ধারণা ও সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল না, সম্রাট যে বিশ্ব ভবনের রাজা, সেই আকাঙ্ক্ষাই উচ্চারিত হতো।
উপজাতি ও তার সম্পত্তিকে রক্ষা করার রাজার সব থেকে বড় দায়িত্ব ছিল। তাকে বহিঃশত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে হতো। জনসাধারণের আচরণ লক্ষ্য করার জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করতেন এবং অপরদিকে শাস্তি দিতেন।
রোমিলা থাপার এর মতে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে রাজার ভূমিকাই ছিল সামান্য, কেননা পুরোহিতদের নিজস্ব ক্রিয়া-কলাপ ছিল। ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্প্রদানের পাশাপাশি পুরোহিত জনসাধারণের কাছ থেকে দান হিসাবে বলী গ্রহণ করতেন এবং প্রয়োজন মতো রাজাকে পরামর্শ দিতেন। পুরোহিত রাজার দেব আবির্ভাব মেনে নিয়ে রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থায় নিজেদের গুরুত্ব বাড়িয়ে ছিলেন।
ঋকবেদে বলি শব্দটি বারবার উল্লেখ থাকলেও নিয়মিত কর ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, সে যুগে তা কিছুই ছিল না। রাজা যে জমির মালিক ছিলেন না, দানস্তুতিগুলি থেকে তা জানা যায়। রাজা পুরোহিতদের সেসব জিনিস দান করতেন দানস্তুতিতে তারও কোন উল্লেখ নেই। যুদ্ধ বা গো হরণ থেকে যা পাওয়া যেত, তার একটি অংশ রাজার প্রাপ্য ছিল।
সুতরাং বৈদিক যুগে যে শাসনব্যবস্থা সূত্রপাত হয় রাজা ছিলেন তার মূল কেন্দ্রে এবং রাজা ছিলেন জনগনের প্রভু। সভা ও সমিতি নামে দুটি জনপ্রিয় ও গুরুত্ব প্রতিনিধিমূলক সংগঠনের অস্তিত্ব বজায় থাকার ফলে রাজার ক্ষমতা অনেক সংকুচিত হয়েছিল। সম্ভবত সমিতি ছিল উপজাতির সর্বসাধারণের পরিষদ। রাজা সমিতির অধিবেশনে পৌরহিত্য করতেন। তিনি সমিতির সদস্যদের নানা প্রভাবিত করতে চাইতেন। কিন্তু সমিতির একবার কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা অমান্য করা অধিকার রাজার ছিল না। মনে হয় সমিতির তুলনায় সভায় সদস্যরা সংখ্যায় অনেক কম ছিলেন। গোষ্ঠীর অভিজাত বা মঘবনরাই সভার সদস্য ছিলেন। এই দুটি উপজাতির প্রতিষ্ঠান রাজতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রিত করায় ঋক বৈদিক যুগে রাজার ক্ষমতা দ্রুত সম্প্রসারণ সম্ভব হয়নি।
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
সম্পর্কিত বিষয়
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)
- বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................