সিকান্দার লোদির মৃত্যুর পর তাঁর শ্রেষ্ঠ পুত্র ইব্রাহিম লোদী আফগান আমীর গণের সমর্থনে বিনা বাধায় ইব্রাহিম শাহ উপাধি গ্রহণ করে 1517 সালে আগ্রার সিংহাসনে আরোহন করেন।
ইব্রাহিম লোদী বা ইবরাহিম লোদি সিংহাসনে আরোহন করে আমীরদের একাংশে উপদেশে তার ভ্রাতা জালালখানকে জৈনপুরের স্বাধীন শাসক নিয়োগ করে প্রকৃতপক্ষে দ্বৈত রাজতন্ত্রের সূচনা করেন। এই প্রচেষ্টায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ইব্রাহিমের অজানা ছিলনা। তার ভাই জালাল খান ক্ষমতা বৃদ্ধির আগে তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন এবং দিল্লি ডেকে পাঠান। কিন্তু জালাল খাঁ সুলতানের আদেশ অমান্য করলে ভ্রাতৃ দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে ওঠে।
ইব্রাহিমের বাহিনীর দ্বারা তাড়িত হয়ে জালাল জৈনপুর ছেড়ে খালটি, আগ্রা, বলিয়ও, মালব হয়ে গন্ড প্রদেশে উঠেছে উপস্থিত হন। গন্ডরা বিশ্বাসঘাতকতা করে জালালকে সুলতানের হাতে তুলে দেয়। ইব্রাহিম তাকে হত্যা করে বিপদ মুক্ত হয়। জালাল যখন গোয়ালিয়রের রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন ইব্রাহিম সেই রাজ্য অধিকার করে পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেন। কিন্তু সেবার অধিকারের সময় মেবারের রানার সঙ্গে ইব্রাহিম বাহিনী শোচনীয় পরাজয় ঘটে। জালাল খানের বিদ্রোহ' ইব্রাহিমের মনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করলে, তিনি রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেওয়ায় অভিজাতদের সঙ্গে সুলতানের এক গভীর দন্ডের সূচনা হয়, অথচ এই অভিজাতরাই ছিলেন সাম্রাজ্যের স্তম্ভ স্বরুপ। ইব্রাহিম এদের চরম শত্রু করে তুলেন। আজম হুমায়ুন সারী ওয়ালি তার প্রচেষ্টায় তিনি গোয়ালিয়র দখল করে ছিলেন এবং তিনি তাঁকেও হত্যা করেন।
সৈন্যবাহিনী |
এইসব ঘটনায় আফগান অভিজাতগণ বিচলিত হয়ে উঠেন। বিহারের শাসনকর্তা দলিয়া খান রোহানির নেতৃত্বে আফগান অভিজাতগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং দিল্লি সুলতানের অধীনতা অস্বীকার করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। লাহোরের শাসনকর্তা দৌলত খান লোদী ছিলেন প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন ব্যক্তি। ইব্রাহিম দৌলতখানকে দিল্লি ডেকে পাঠালে দৌলতখানের পুত্র দিলওয়া খান দিল্লিতে পাঠান। ইব্রাহিম দিলওয়াখানকে বলেন যে, সুলতান আদেশ না মানলে তার পিতার কি শাস্তি হবে তারও ইঙ্গিত দিয়ে দেন। তিনি লাহোরে ফিরে গিয়ে পিতাকে সব ঘটনা জানান এবং ইব্রাহিমের শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
দিল্লি সালতানাতের পতনের কারণ
ইব্রাহিম যখন পূর্বাঞ্চলে আফগান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যাস্ত তখন দৌলতখান কাবুলের অধিপতি বাবরকে ইব্রাহিম এর বিরুদ্ধে ভারত আক্রমণের জন্য আহ্বান করেন। বাবর ইব্রাহিমের বাহিনীকে পরাজিত করে লাহোর অধিকারী করেন। ক্ষুব্দ দৌলতখান আলম খানের এর সাহায্যে দিল্লি আক্রমণ করেন, কিন্তু ইব্রাহিমের হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। 1526 সালে পানিপথ নামক স্থানে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেও ইব্রাহিম লোদী পরাজিত এবং নিহত হন। বাবর এই ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্য দিয়ে দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের অবসান ঘটিয়ে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন।
ইব্রাহিম লোদী যদিও সাময়িক নেতা হিসাবে দুর্ধর্ষ, উদার, ব্যক্তিগত জীবনে কলঙ্ক শূন্য ছিলেন, কিন্তু শাসক হিসেবে মোটেও যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারিনি। সবথেকে বড় কথা হলো যে, নিজে একজন আফগান ছিলেন, কিন্তু আফগান জাতির চরিত্রকে ভালোভাবে বুঝতে পারেনি। তিনি নির্বোধের মতো কূটনীতি প্রয়োগ করে চারিদিকে তার স্বজাতি আফগানদের ব্যক্তিগত শত্রুতে পরিণত করে এবং সেটাই ছিল তার পতনের প্রধান অন্যতম কারণ।
তথ্যসূত্র
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার (আরো পড়ুন)
- দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যায় (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
-----------------------------