সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে গুপ্ত শাসনকাল ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবজনক যুগ। কেবলমাত্র রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টি ও সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তনই এই যুগের বৈশিষ্ট্য ছিল না। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান সর্বক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব অগ্রগতি এই যুগকে গৌরামবিত করে তুলেছিল। এই সভ্যতায় যে অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছিল, তার পিছনে কতোগুলি কারণ ছিল, এর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
গুপ্ত যুগের সাহিত্য ও সংস্কৃতি
গুপ্ত যুগ সাহিত্য সৃষ্টি ও সংস্কৃত ভাষায় উৎকর্ষের জন্য সুবিখ্যাত ছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে, গুপ্তযুগে সংস্কৃত ভাষার পূর্ণ আবির্ভাব হয়নি। কিন্তু ঐতিহাসিকগণ একথা বলে মনে করেন না। তবে গুপ্ত সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং দেশের অনুকূল আবহাওয়ার জন্য এই ভাষার অভাবনীয় উন্নতি হয়েছিল। এই যুগের অধিকাংশ শিলালিপি ও সাহিত্যগুলি সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছিল। বহু সংখ্যক খ্যাতনামা সাহিত্যিকরা এই যূগকে আলোর সম্মান দেখিয়েছেন। যেমন- কালিদাস রচিত শকুন্তলা, মেঘদূত, কুমারসম্ভব নাটক বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।
গুপ্ত যুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
এই যুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে এক অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছিল। এই যুগে যেসব নিদর্শনগুলি পাওয়া গেছে, তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের দেওঘরে উপস্থিতি একটি প্রস্তর নির্মিত নিয়মিত মন্দির এবং কানপুরে অবস্থিত একটি ইস্টক নির্মিত মন্দির, এগুলি ছিল গুপ্ত যুগের স্থাপত্য শিল্পের এক চমৎকার নিদর্শন। স্বারনাথে অবস্থিত একটি প্রস্তর নির্মিত মন্দির গুপ্ত যুগের স্থাপত্য শিল্পের উৎকর্ষতার পরিচয় দেয়। আবার ভাস্কর্যের ক্ষেত্রেও এই যুগের অভাবনীয় উন্নতি দেখা যায়, যেমন- স্বারনাথ ও মথুরায়় দেবদেবীর মূর্তি গুলির কারুকার্য এবং অঙ্গবিন্যাস সত্যি প্রশংসার যোগ্য। পৌরাণিক উপাখ্যান অনুযায়ী রামকৃষ্ণ, বিষ্ণু, শিব প্রভৃতির মূর্তি গঠন এযুগের ভাস্কর্য শিল্পের প্রধান বিষয়বস্তু।
গুপ্ত যুগের শিল্পকলা
অজন্তা গুহা |
গুপ্ত যুগে চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রেও যে অভূতপূর্ব বিকাশ হয়েছিল, তা অজন্তা গুহার চিত্রগুলি এক প্রকৃষ্ট প্রমাণ। পাহাড় কেটে গুহার মন্দির নির্মাণ ও মন্দিরে দেওয়ালে অপূর্ব চিত্র অংকন গুপ্ত যুগের চিত্রশিল্পের উৎকর্ষতার পরিচালক। অজন্তার বিস্ময়কর গুহা চিত্রগুলি রেনেসাঁস যুগে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ প্রাচীন চিত্রগুলির সমতুল্য।
গুপ্ত যুগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি
জ্যোতিষ, গণিত, রসায়ন প্রভৃতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও গুপ্ত যুগের অভূতপূর্ব উন্নতি দেখা গেছে। আর্যভট্ট ছিলেন এই যুগের শ্রেষ্ঠ গণিত শাস্ত্রবিদ এবং বরাহমিহির ছিলেন শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ। ভারতীয় বৈজ্ঞানিকগণ গ্রিক ও রোমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের সহিদ পরিচয় ছিলেন। আবার চিকিৎসার বিজ্ঞানের সঙ্গেও গুপ্তযুগ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল।
গুপ্ত যুগের ধর্ম
গুপ্তযুগে ধর্মের ক্ষেত্রে এক জোয়ার এসেছিল। মূলত সম্রাটরা ব্রাহ্মণ ধর্মাবলম্বী উন্নতি দেখা যায়। ব্রাহ্মণ ধর্মের এই অভাবনীয় উন্নতি দিক পর্যালোচনা করে ম্যাক্সমুলার সহ বিভিন্ন পণ্ডিতগণ এই যুগকে হিন্দু ধর্মের পুনর্জন্ম বা নবজাগরণের যুগ বলে অভিহিত করেছে।
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................