খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মহাজনপদ গুলির গৌরব অবসান শাসনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের রাজনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার দেখা যায় এবং ভারতে তখন কয়েকটি বেশ শক্তিশালী রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়, যেমন- মগধ, বৎস, কোশল, অবন্তী প্রভৃতি। এই চারটি রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তারের লড়াই করেছিল প্রায় 100 বছর ধরে। পরিশেষে রাজ্যগুলির মধ্যে মগধ এক শক্তিশালী রাষ্ট্র শাসিত রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং অন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জয় করে একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যে ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে। এমনকি উত্তর ভারতের ইতিহাসে কয়েক শতাব্দী ধরে মগধ ছিল রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী ভাষায় প্রাচীন ভারতীয়় রাজনীতিতে মগধ একই ভূমিকা পালন করেছিল।
মগধের সমাজে প্রচেষ্টায় ইতিহাসে হর্যঙ্ক বংশের পদক্ষেপেই ছিল প্রথম ও অগ্রগণ্য। তবে এই বংশের প্রতিষ্ঠা ও প্রথমদিকে শাসকদের সম্পর্কিত তথ্যের অভাবে ঐতিহাসিকগণ একমত হতে পারেনি। বিম্বিসার ছিলেন এই বংশের শাসক। বিম্বিসারের সিংহাসনে আরোহনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের ক্ষেত্রে যে সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল তা টিকে ছিল চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন কাল পর্যন্ত। মগধের সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার ক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকে যে সম্ভাবনাময় স্বয়াগ পূর্ণ পরিস্থিতির দিকগুলি উপস্থিত হয়েছিল, তা পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে বিম্বিসার হর্যঙ্ক বংশের মগধের এক বিশাল সাম্রাজ্জ্য তুলেছিলেন। স্বয়াগ পরিস্থিতিগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিম্বিসারের বিচক্ষণতা নীতির সম্পর্কে রমিলা থাপার লিখেছেন - "একটি বড় রাজ্যে যদি নদী পথকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে তার গুরুত্ব ও সম্ভাবনা কি হতে পারে, তা বিম্বিসার উপলব্ধি করেছেন এবং মগধকে সেই ভাবে গড়ে তুলেছিলেন"।
বিম্বিসারের পিতা ছিলেন দক্ষিণ বিহারের একটি ক্ষুদ্র রাজ্যের সামন্ত রাজা, তার নাম ছিল ভট্টিয়। বিম্বিসারকে মাত্র 15 বছর বয়সে তার পিতা নিজ হাতে রাজপদে বসান। বিম্বিসারের নামের সঙ্গে যুক্ত বিশেষণ, সৈনিয়ও বা সৈনিক থেকে অধ্যাপক ভান্ডারকর মনে করেন যে, সিংহাসন আরোহণের পূর্বে তিনি একজন সেনাপতি ছিলেন। বিম্বিসার সিংহাসন আহরণ করে পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে শপথ গ্রহণ করেন। তেমনি রাষ্ট্রের সঙ্গে আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে নিজ রাজ্য রক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন, এই উদ্দেশ্যে তিনি বীর যোদ্ধা ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সুদক্ষ সৈন্যবাহিনী সংগঠন করেন। তিনি অঙ্গরাজ্যকে পরাজিত করেন এবং তার সাম্রাজ্য নিজ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। ঐতিহাসিকগণ তার যুদ্ধজয়ের নীতিকে দুুটি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেন- বৈবাহিক সম্পর্কের নীতি এবং যুদ্ধ জয়েের নীতি। এই সময়় তিনি নিজ পুত্র অজাত শত্রুকে অঙ্গরাজ্যের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ রাজ্য জয় ছিল অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এই রাজ্য জয়ের ফলে সামুদ্রিক বন্দদরগুলি তার অধিকারে আসে। বার্মা ও পূর্ব ভারতের সাথে বাণিজ্যিক যোগসুত্র গড়ে ওঠে যা মগধকে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক পর্যায়ে উন্নতি করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল।
বৈবাহিক সম্পর্কের নীতি
অজাত শত্রু
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)।
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
সম্পর্কিত বিষয়
- মগধের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)।
- বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)।
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।