আদি মধ্যযুগের পর্বে জাতি বর্ণ ব্যবস্থার পূর্ণ প্রবণতা গুলি কি কি ছিল

জাতিভেদ প্রথা, যা অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাথমিক বা মধ্যযুগীয় সময়েও সমাজের ভিত্তি হিসাবে অব্যাহত ছিল। কিন্তু বর্ণপ্রথার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। সেই সময় কালে গোঁড়া অংশটির জাতিকে নির্ধারণের সিদ্ধান্তকারী উপাদান হিসেবে সংস্কৃতির পরিবর্তে বংশগতি গ্রহণ করেছিল। বর্ণ ও জাতিকে কার্যত সমর্থক হিসেবে গণ্য করা শুরু হয়। জাতিদের প্রসারের কারণে বর্ণের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।

অপরিবর্তিত চার বর্ণ মডেলের দৃষ্টিভঙ্গি কখনো কখনো তৎকালীন তাত্ত্বিকদের দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে স্পষ্ট ভাবে। শুধুমাত্র দুটি স্তরে বিভক্ত সমাজের একটি চিত্র উপস্থাপনের প্রয়াস দেখা যায় দ্বিজ(আক্ষরিক দুবার জন্ম করা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্রাহ্মণ কে বোঝায়) এবং অদ্বিজ(আক্ষরিক অর্থেও অদুবার জন্মগ্রহণ করা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যার অর্থ শূদ্র)। এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত তাত্ত্বিকভাবে ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যদের উল্লেখযোগ্য সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে অস্তিত্বকে বাদ দেয়। প্রাথমিক মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষী অঞ্চলে এই ধরনের পরিস্থিতি বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়।

আদি মধ্যযুগের পর্বে জাতি বর্ণ ব্যবস্থার পূর্ণ প্রবণতা গুলি কি কি ছিল

শ্রেণী বিন্যাস জাতিবর্ণ সমাজের সবচেয়ে উঁচু পদে স্পষ্টতর ভাবে ব্রাহ্মণরা ভোগ করতো। ব্রাহ্মণরা সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের শীর্ষ অবস্থান করেছিল। সমাজে তার সর্বোচ্চ আচার-অনুষ্ঠানের মর্যাদা ছাড়াও, বৈদিক, মহাকাব্য ,পুরাণিক ও অন্যান্য বিভিন্ন শাস্ত্রীয় ঐতিহ্য ব্যাখ্যাকারী একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে ব্রাহ্মণ স্বভাবতই নিম্ন জাতি তুলনায় একটি বিশিষ্ট এবং সুবিধাজনক স্থানে ছিলেন যার সংখ্যা ক্রমাগতভাবে ছিল। প্রসারিত সমসাময়িক সাহিত্য এবং শিলালিপি গুলি দেখায় যে- ব্রাহ্মণদের অসংখ্যা উপধারা ছিল। সমসাময়িক উপাদানগুলি ও ব্রাহ্মণদের বিশেষ অধিকার এর ধারাবাহিকতা দেখায়, যেমন- নিছক জন্মের সভ্যতা দ্বারা সমস্ত বর্ণের প্রতি শ্রদ্ধা দাবি করা, সমস্ত শ্রেনীর কর্তব্য ব্যাখ্যা করা, মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি, কর থেকে অব্যাহতি এবং এই জাতীয় আরোও  অনেক সুযোগ-সুবিধা।

আদি মধ্যযুগের পর্বে জাতি বর্ণ ব্যবস্থার পূর্ণ প্রবণতা গুলি কি কি ছিল

ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজপুত জাতির উত্থানের  ফলে জাতির বিস্তার হয়েছিল। তারা তাদের বংশগৌরব বৃদ্ধির জন্য সূর্য অথবা চন্দ্রবংশজাত থেকে আগত মানুষরা যেমন হুন এবং গুজররা রাজপুত পদের যোগ দিলে তাদের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। সমসাময়িক স্মৃতি শাস্ত্রগুলিতে তাদের পতিত ক্ষত্রিয় রূপে বর্ণ ব্যবস্থায় স্থান করে দেওয়া হয়। খুব সম্ভবত সোলাঙ্কি,পরমার, চাহমান, তোমর এবং গাহড় বালদের মূল শিকড় ও মধ্য এশিয়ায়। যদিও জাটরা রাজপুত হিসেবে গৃহীত হয়নি, কিন্তু তা সত্বেও তারা মধ্য এশিয়ার লোকেদের সঙ্গে জাতিগত স্বীকৃতি পেয়েছিল।

যাইহোক সমন্বিত ক্ষত্রিয় বর্ণের চিত্র নির্মাণের চেয়ে শনাক্তযোগ্য বৈশ্য বর্ণ খুঁজে পাওয়া কম কঠিন নয়। বৈশ্যদের কৃষি ,গবাদি, পশু পালন ও বাণিজ্য করার শ্রুতি আদর্শ মধ্যযুগের প্রথম দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, কারণ অসংখ্য পেশাজীবী জাতি বৈশ্য বর্ণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হয়েই বহুবিধি- কারুশিল্প ও পেশা গ্রহণ করেছিল। যদি কোন বৈশ্য থাকত, তবে তারা বণিকের এর সমার্থক হয়ে উঠতো।

আদি মধ্যযুগের শূদ্রদের ও সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। প্রথমদিকে সংহিতা গুলিতে ১০-১৫টি মিশ্র জাতি উল্লেখ আছে। পরবর্তীকালে মনুসংহিতায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১টি। ব্রহ্ম বৈবত পুরাণের জাতির যে অতিরিক্ত তালিকা আছে, সেগুলি ধরলে জাতির সংখ্যা ১০০ ছড়িয়ে যায়। এই বিপুল সংখ্যা বৃদ্ধি উল্লেখ যাদব প্রকাশের বৈজয়ন্তী ও হেমচন্দ্রের অভিধান চিন্তামণিতেও। অনুমানিক অষ্টম শতকের লিখিত বিষ্ণুধমোওর  পুরানের বলা হয়েছে, বৈশ্য স্ত্রী এবং নিচু জাতের পুরুষের সম্পর্ক রচিত হওয়ার ফলে হাজার হাজার মিশ্র জাতির উৎপন্ন হয়েছে, যদিও এরা নির্দিষ্টভাবে বিজিত উপজাতিরা শূদ্র হিসেবে ব্রাহ্মন্য সমাজের গৃহীত হয়। এছাড়াও কারুশিল্প থেকেও বহু নতুন নতুন জাতির উদ্ভব হয় এবং এদের অধিকাংশই মিশ্র জাতির মর্যাদা লাভ করে।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, আদি মধ্যযুগের যে জাতি বিস্তার প্রক্রিয়া চলে সেখানে জাতিগত মর্যাদা একেবারে অনড় ছিল তেমনটা নয়। সামাজিক সচলতাও বিশেষ সক্রিয় ছিল। নিম্ন জাতিগুলি অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং অনেক সময় উচ্চবর্ণের সংস্কৃতিকে আস্মীকরনের মধ্য দিয়ে(M.N. Srinivas যাকে  Sanskritization বলেছেন) তাদের জাতি মর্যাদা বৃদ্ধি করতে সমর্থ হতো। বিপরীত প্রক্রিয়া প্রচলিত ছিল অর্থাৎ উচ্চতর জাতি বিভিন্ন কারণে তাদের পূর্বের জাতি মর্যাদা হারিয়ে নিম্নতর জাতিতে পরিণত হত, যেমন - স্বর্ণকার, সুবর্ণ বানিক, সুত্রধার ও চিত্রকাররা পূর্বে সৎসূত্র পর্যায়ভুক্ত ছিল। পরে তারা ব্রাহ্মণের অভিশাপে পতিত হয়ে অসৎশুদ্র পর্যায়ে অবনমিত ছিল(ব্রহ্মবৈবত পুরাণ)। এইভাবে আলোচ্য যুগে  জাতিবর্ণ ব্যবস্থা মূল প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।


তথ্যসূত্র

  1. Sudipa Bandyopadhyay, "Architectural Motifs in Early Mediaeval Art of Eastern India: (Pala-Sena Period)".
  2. Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".

    সম্পর্কিত বিষয়

    1. 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি  (আরো পড়ুন)
    2. মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)

    লেখকের পরিচিত

    নাম- অমিতাভ গোস্বামী
    শিক্ষাগত যোগ্যতা- MA. Honours, B.ED,
     বিভিন্ন গ্রন্থের লেখক
    ঠিকানা- আরামবাগ, তালারপাড়
    Gmail I'd- goswamiamitava85@gmail.com
    Contact number- +918617491526
    WhatsApp number- +91 81452 62221

       

      সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
        ...........................


      নবীনতর পূর্বতন
      👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
          
        
        👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
        
      
      
        
      
         
      
          👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
        
      
      
        
      
         
        
        
          👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
      
          👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
      
      
      
      
          
        
      
        
      
      

      টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

      
      

      টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


       


       




      
      

      👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

      
      
      

      👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

      👉ক্লিক করুন 🌐