এই সুদীর্ঘ বিশাল আয়তনের হরপ্পা সভ্যতার অস্তিত্ব আনুমানিক ১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পরে আর ছিল না, কিন্তু দীর্ঘ সময়ের এই বিশাল বিরাজমান হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ কি?- তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক বিরাজমান রয়েছে।
📖 হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন মতামত
👉 অধ্যাপক ডেলস ও রাইক মনে করেন যে, প্রতিবছর সিন্ধু নদের যে বাৎসরিক বন্যা হতো তারপরে হরপ্পা সভ্যতা ব্যাপকভাবে প্রতিবার বিপদস্থ ও ক্ষয়ক্ষতি হতো। এসব বন্যার কারণে মহেঞ্জোদারো নগর বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তার মেরামত করা হয়েছে- তা প্রমাণ পাওয়া গেছে বহুবার। তাছাড়া মহেঞ্জোদারোর মতো উন্নত নগরে এতো বন্যার প্রমান আর অন্য কোন নগরে পাওয়া যায়নি এবং এই মহেঞ্জোদারো মতন এত উন্নত সভ্যতা বন্যার রুখে দাঁড়ানোর জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ও তার ফলে বন্যার জন্য এই সভ্যতার পতন হয়েছে- তা এই যুক্তি অতি সরল যুক্তি হিসেবে ধরা হয় থাকে ।
👉 অধ্যাপক গুরুদীপ সিং তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, একসময় সিন্ধু নদীর উপর থাকার জলবায়ুর ছিল আর্দ্র ও কৃষির জন্য উপযোগী এবং এর ফলে কৃষি কাজ ভালোই উন্নত মানের হতো, কিন্তু ২২০০ খ্রিষ্টপূরবদ্ধ নাগাদ সিন্ধু নদের উপর তাকে জলবায়ুর এক পরিবর্তন ঘটে, এই পরিবর্তনের ফলে কৃষি কাজের বিপর্যস্ত দেখা দেয়। এই জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে এবং নগরের যে বাড়ি ঘর তৈরির জন্য ইটের জন্য প্রচুর গাছ কাটা শুরু হয় এবং এর ফলে প্রানীজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রচুর পরিমাণে হ্রাস হয়। এসব ফলে জলবায়ু আরও সূক্ষ্ম হয়ে যায় এবং কৃষি ব্যবস্থায় সংকটে দেখা যায়।
👉 আবার পুরাতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০ পরিবর্তি সময়ে হরপ্পা সঙ্গে মেসোপটেমিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের ভাতা দেখা যায়, এর ফলে কারিগরি শিল্পের উৎপাদন যথেষ্ট হ্রাস পায় এবং নগরের উপর নির্ভর কারিগর শিল্পের উৎপাদন এবং বিনিময় কেন্দ্র হিসেবে নগরগুলি অপাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
👉 আবার বহু গবেষণায় দেখা গেছে যে, পূর্বের নগরগুলি যে অবক্ষয়ের চিহ্ন সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় এবং তার দেখে মার্টিমার হুইলার মতো কিছু জনৈক ঐতিহাসিক হরপ্পা সভ্যতার বিপর্যয়ের দেখে মনে করেন যে- প্রথমে নগরগুলির যে সুবিন্যাস নগর পরিকল্পনা এবং নগরের জীবনযাপন, রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক যে উন্নত ছিল তা পরবর্তীকালে ম্লান হয়ে যায় এবং এই জন্যই এই সভ্যতার পতন ঘটেছে।
👉 আবার অধ্যাপক মার্টিমার হুইলার হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য যে কারণটি ব্যাখ্যা করেছেন তা হল, বৈরাগত আক্রমণ তত্ত্ব। সেখানে তিনি বলেছেন যে- হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংসাবশেষে বহু নর কঙ্কাল দেখা গেছে এবং সেই নর কঙ্কালের বহু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং তা সৎকার করা হয়নি এবং তিনি আরো বলেন যে- এই ধ্বংসাবশেষ ধ্বংস হয়েছে দেবরাজ ইন্দ্রের আক্রমণের ফলে। কিন্তু হরপ্পা সংস্কৃতির পতনের প্রসঙ্গে মার্টিমার হুইলার এর বাস্তুতান্ত্রিক অবক্ষয়ের তত্ত্ব তুলে ধরেছেন তার মেনে নেওয়া কঠিন, এমনিতেই আর্যদের আগমন ঘটেছিল মাইগ্রেশনের ফলে কিন্তু অভিযানের মধ্যে দিয়ে নয়।
📖 যাইহোক পরিশেষে এই কথা বলা যায় যে, হরপ্পা সভ্যতা পতনের জন্য বিশেষ একটি কারণকে দায়ী করা যায় না। হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য একাধিক কারণ রয়েছে এবং একাধিক কারণে জন্য হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
👉তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)।
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
👉সম্পর্কিত বিষয়📖
- মগধের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)।
- বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)।
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🌐।