নব্য প্রস্তর যুগের সভ্যতা গুলির বিনাশ ও বিকাশ
প্রত্নতাত্ত্বিক বিদরা ভারতের প্রস্তর যুগে পুরা প্রস্তর, মধ্য প্রস্তর, নব্য প্রস্তর- এই তিনটি পর্বে বিভক্ত করেছেন। ভারতের বিভিন্ন স্থানে নব্য প্রস্তর পর্বের আগমন ভিন্ন ভিন্ন সময় হয়েছে সেগুলি মহম্মদ পর্বের সূচনা হয় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সময়ের মাঝামাঝি পর্বের দিকে।
👉 নব্য প্রস্তর যুগের সভ্যতাগুলির অবস্থান
বেলুচিস্তানের মেহেরগড়ের এই পর্বের সূচনা হয় আনুমানিক ৬০০০ খ্রিষ্টাব্দে ও তারেও কিছু পূর্বে। কাশ্মীরে নব্য প্রস্তর পূর্বে আবির্ভাব হয়েছিল ২৪০০ খ্রিস্টপূর্ব, কাশ্মীরের পর্ব প্রায় ৯ বছর স্থায়ী হয়েছিল।
ভারতীয় নব্য প্রস্তর সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য প্রত্ন ক্ষেত্রগুলি হলো- বেলুচিস্তানে কিলিগুর মোহাম্মদ, মেহেরগড়, কাশ্মীরের বুর্জাহাম, বিহারের চিরান্দী, অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকী, কর্নাটকের তালুর এবং পোনপল্লীতে।
👉নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য
তবে এই প্রস্তর সংস্কৃতির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সহজে আমাদের চোখে পড়ে যা -----
- এই যুগে সব হাতিয়ার গুলির পাথরের এবং সেগুলি অ্যাগেট কালো প্লেট বা বেলে পাথর তৈরি হোক আর না কেন সেগুলি ছিল মসৃণ। এই মসৃণ যুক্ত পাথরের হাতিয়ার পূর্বে কখনো দেখা যায়নি।
- মধ্য প্রস্তর যুগের কয়েকটি স্থানে পশুপালনের কাজ শুরু হয়েছিল, কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগে মাঝামাঝি সময় কোন কৃষি কাজের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়, যেমন- ধান, গম এবং ডাল উৎপন্ন হতে থাকে। পরবর্তীকালে মেহেরগড় তুলার চাষও শুরু হয়, শুধু কার্পাসের ক্ষেত্রেও নয়। এই উপমহাদেশে যব ও গমের চাষাবাদের প্রাচীনতম নিদর্শন এর উদ্দেশ্য ছিল মেহেরগড়। ধীরে ধীরে পশুপালন মানুষের কাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং স্থায়ী বাসস্থানের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভবঘুরের জীবনের অবসান ঘটতে থাকে।
- এই যুগের হাড়ে তৈরি হাতিয়ার এর ব্যবহার বহুবনে বৃদ্ধি পায়, যেমন- হাড়ের তীরের ফলক, ছোড়া প্রভৃতির হাতিয়ার এই পর্বের বিভিন্ন প্রত্ন ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে।
- মধ্য প্রস্তর যুগে কয়েকটি স্থানে মৃৎপাত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছিল এবং মৃৎপাত্র গুলি মানুষের উপযোগী চাহিদা মেটাতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল।
- বয়ন শিল্প এই যুগের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার।
👉নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয়
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের যেমন পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত, তেমনি বসবাসীর জন্য চালাঘর নির্মাণ করেছিল, এসব চালাঘর ছিল কাঠ, ঘুটি ও মাটির দেয়াল নিয়ে গঠিত। আবার কখনো কখনো দেখা গেছে যে, তারা পাথরের উপর পাথর চাপিয়ে বসবাসের জায়গা নির্মাণ করতে পেরেছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থেকেই তামার ব্রোঞ্চের জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে মনে করা হয়েছে। এই যুগের শেষের দিকে মানুষ হয়তো ধাতুর ব্যবহার শিখেছিল, তবে তারা ধাতুর জিনিস তৈরি করতে পারত না।
বেলুচিস্থানের কয়েকটি স্থানে পোড়ামাটির মৃতকার দেবীর সন্ধান পাওয়া গেছে। নব্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা এই দেবীর ও সাপের পূজা করতো। সাপ মারা গেলে তার দেহ সমাধি করা হতো। অনেক সময় সমাধিতে মানুষেরও সাথে পশুর বিশেষ করে কুকুরের হাড় পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে- মৃত প্রভুর সাথে কখনো তার প্রিয় পশুকেও সমাধিস্থ করা হতো।
📖 মূল্যায়ন
নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির অগ্রগতি হয়েছিল। কৃষি ও পশুপালনের বিকাশ, মৃৎশিল্পের ও বয়ান শিল্পের সূচনায় মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। তাদের কাছে উন্নত হাতিয়ার না থাকার জন্য সর্বদাই এর গভীর জঙ্গল এড়িয়ে চলত। এর ফলে পাথর পাওয়া যেত এমন সব স্থানে তারা বসবাস করত। তার সঙ্গে একথা ঠিক যে, রে সময় কৃষির বিকাশ ঘটেছিল ঠিকই, কিন্তু উৎপাদন যা হতো তা প্রয়োজনে মিটিয়ে উদ্ভূত কিছুই থাকতো না। তারা অনেকটাই মার্জিত হয়েছিল, কিন্তু সভ্য হয়নি। আবার তার সঙ্গে আমরা স্বাভাবিক বিচারে বলতে পারি যে, তারা সভ্যতার দুয়ারে এসে পৌঁছেছিল একথা সত্য।
........... সমাপ্ত.............
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)।
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
👉সম্পর্কিত বিষয়📖
- মগধের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)।
- বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)।
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🌐।