ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের বিবরণ দাও ? একে কি তুমি রেনেসাঁস বলবে

ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের সংস্কৃতিক চর্চা

মধ্যযুগের সূচনা পর্বে ইউরোপের ইতিহাস ক্যারোলিঞ্জীয় শাসনকাল সামাজিক, শাসনতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। ক্যারোলিঞ্জীয় বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন শার্লামেন। তিনি কেবল রাজ্য বিজয় বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা শাসনতান্ত্রিক কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন না সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে ইউরোপ ছিল এক অধিকারময় অধ্যায় অজ্ঞাত, ধ্রুপদী সংস্কৃতির অবক্ষয় ইউরোপকে গ্রাস করেছিল, সেই সময় ফ্রান্স শাসক শার্লামেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইউরোপ শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চায় শুরু হয় তাঁর প্রচলি অধারা পরবর্তী ক্যারোলিঞ্জীয় শাসকদের আমলে প্রবাহমান ছিল। 


📖এই সংস্কৃতির প্রসঙ্গে ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের সংস্কৃতি চর্চা সংস্কৃতিক কার্যকলাপের বিভিন্ন দিক আলগা করা যায়---

👉রাজকীয় বিদ্যালয়

কেরোলিঞ্জীয় যুগের সংস্কৃতি চর্চার মূল কেন্দ্র ছিল শার্লামেনের রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন বিদ্যালয় তার রাজধানী আমের নগরীতে রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন একটি বিদ্যালয়ে স্থাপন করেন। এখানে শার্লামেন এর নিচে তার পত্নী নিকট আত্মীয়রাজ কর্মচর্চার ও তাদের স্থানরা শিক্ষ লাভ করতো। খৃষ্টান জগতে নামকরা বিদ্যালয়গুলির মধ্যে Palace School সুপরিচিত লাভ করে। এভাবে শার্লামেনের উদ্যোগে রাজকীয় বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে শিক্ষা লাভ জ্ঞান চর্চার পরিমণ্ডল গড়ে ওঠে।


👉জ্ঞানচর্চার পণ্ডিতদের সমাগম

ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের বিবরণ দাও ? একে কি তুমি রেনেসাঁস বলবে
ক্যারোলিঞ্জীয় বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক শার্লামেন

শার্লামেন নিজে নিরক্ষর হলেও জ্ঞান চর্চার প্রতি আদর্শ উৎসাহী ছিলেন, তাই তিনি দেশ-বিদেশ থেকে পন্ডিতদের জ্ঞানচর্চার জন্য আমন্ত্রণ করে এনেছিলেন রাজকীয় বিদ্যালয়। ইংল্যান্ডের পন্ডিত আল কুইন বিশিষ্ট ঐতিহাসিকগণ দ্যাডিকন (Pow The Deacon) স্পেনের কবি থিওডালক, পিসা শহরের পির্তার, ব্যাকরণবিদ কবি ও ধর্মতাত্ত্বিক পালিনাস,  পন্ডিত আন্জিল বার্ট প্রমুখের সমাবেশ ঘটেছিল রাজকীয় বিদ্যালয়ে। এইসব পন্ডিতরা নিজ নিজ বিষয় জ্ঞান চর্চার বিশেষ অবদান রাখেন। ঐতিহাসিক পল দা ডিকন History of the Lombads নামে গ্রন্থ লিখে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। আলকুইন  অলংকার স্বাস্থ্য, ব্যাকরণ, লিপি বিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পন্ডিতের পরিচয় দেন। Theodulf কবি হিসেবে এবং Anglibert পানু লিপি সংগ্রহ করেন। পিসা শহরের পিটার ব্যাকরণ বিদ্যা চর্চা করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার আইন হাড সালাম্যানের জীবনের রচনার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন শিক্ষা সংস্কৃতির বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন।


👉ল্যাটিন ভাষাচর্চা

খ্রিস্টান ধর্মের প্রধান গ্রন্থগুলি ল্যাটিন ভাষায় রচিত হয়েছিল। তাই খ্রিস্টানদের ধর্মীয় চিন্তাধারা ও ধর্মশাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্য ল্যাটিন ভাষার লেখা ও ল্যাটিন ভাষা চর্চা গুরুত্ব লাভ করেছিল। ক্যারোলিঞ্জীয় যুগে অবক্ষয় প্রাপ্ত ল্যাটিন ভাষায় চর্চা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কবিতা ও কাব্য রচনায় ভাষায় গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় ‌‌‌।


👉সাহিত্য ও কাব্য চর্চা

স্পেনের কবি Theodalf এর কবিতাগুলিতে শার্লামেনের রাজদরবারের আকর্ষণীয় চিত্র ফুটে উঠেছে। তাঁর কবিতায় ভাষা ছিল চমৎকার। M. C.W.  laistner তাঁর Thought and letters in western Europe গ্রন্থে theodelf এর ভাষায় আকর্ষণীয় দিকগুলি বর্ণনা পাওয়া যায়। P. S. Allen এবং H. M. jones তাদের The Romenelw Lyric গ্রন্থে ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের কাব্য চর্চার দিকটি তুলে ধরেছেন। তাদের বর্ণনা থেকে জানা যায় শার্লামেনের বিজয় অভিযান খ্রিস্টান ধর্মের বিভিন্ন বিষয় ধর্ম কেন্দ্রিক মোট জীবনের বিভিন্ন দিক এবং মানব জীবনের আবেগ অনুভূতি ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের কাব্য চর্চাকে উন্থিত করেছিল (সৌন্দর্য্য ও শিল্প কলার)। শার্লামেনের রাজসভায় কবি ও বাইবেল বিশেষজ্ঞ এঞ্জিল বাট সেযুগে হোমার নামে পরিচিত হয়।

জার্মানির মেইনদ শহরে আট বিষপ, রাবানাস, ম্যারস ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের জন্য তিনি জার্মানির প্রথম শিক্ষক বলে পরিচিত হন। তিনি Derirum Naturis নামে বিশ্বকোষ রচনা করেন। নবম শতকের মাঝামাঝি সময়ে ধর্মতাত্ত্বিক গটসাচালক, সেন্ডুলিয়াস, স্কটাস পণ্ডিতের পরিচয় দেয়। স্কটাশ সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং তৎকালীন মানুষের জীবন যাত্রার দিকটি সুনিপুণভাবে তার রচনায় তুলে ধরেছেন। এছাড়া জার্মানির ওডোএকার ও Theodoric এর সংগ্রামের বিষয়টি রচনা সে যুগের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাকে সমৃদ্ধ করে।


👉লিপি শৈলির ব্যবহার

এ যুগের শিল্পচর্চায় অন্যতম অবদান ছিল লিপি শৈলীর ব্যবহার। এসময় আলোকুইন এর সহায়তায় মেনেসকিউল নামে এক লিপি শৈলির ব্যবহার শুরু হয়। সেই লিপি শৈলীতে পরিষ্কার ও ছোট হাতের অক্ষরের লিপিগুলি সহজেই বোঝা যায়।

 

👉পুঁথিপত্র সংগ্রহ

এই যুগে জ্ঞান চর্চা অঙ্গ হিসেবে মূল্যবান পুঁথি পত্র সংগ্রহের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। গ্রন্থাগারগুলি সাধারণত দেখাশোনা করত। মঠ গুলি সেযুকে মূল্যবান পুঁথিগুলি নতুন করে সংকলন করে সংরক্ষণ করা হতো। Lupel নামে একজন মঠাদক্ষ বহু পান্ডুলিপি সংগ্রহ করে এবং নিজ বাসস্থানে বিদ্যাচর্চার উপযোগী করে গ্রন্থাগার বিষয়ে পারদক্ষিতায় পরিচয় দেন।


👉শিল্পকলা

ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের বিবরণ দাও ? একে কি তুমি রেনেসাঁস বলবে
শিল্পকলা 
Source - click here 

ক্যারোলিঞ্জীয় যুগে শিল্প স্থাপত্য চর্চায় ও আগ্রহ ও উৎসাহ দেখা দেয়। শার্লামেনের রাজধানী আমেন ছিল স্থাপত্য শিল্পের মূল কেন্দ্র। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গির্জা প্রাসাদ ও অট্টালিকা নির্মাণের মধ্য দিয়ে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটে। শার্লামেনের করভে না থেকে বহু বিখ্যাত সু প্রতীক এনেছিলেন। শিল্পচর্চার জন্য এ যুগে প্রাচীন রোমান খ্রিস্টান ধারা ও আঞ্চলিক ধারার সংমিশ্রণে ক্যারোলিঞ্জীয় ও শিল্প কলার বিকাশ ঘটে। শার্লামেনের শাসনের পাশের নির্মিত চার্জ পূর্ব রোমান সম্রাট জাস্টিমিয়ার আমলে স্বানভিতেল গির্জার অনুকরণ এর নির্মিত হয় ও তার স্তম্ভ নির্মাণের রথ রীতি অনুসারে থিওডরিক প্রাসাদ স্তম্ভের রীতি অনুসরণ করা হয়। বাইজান্টাইন নীতি অনুসারে চার্চের মেঝেতে ব্যাঞ্জন সোজ্জাসিক পাথরের ব্যবহার লক্ষ্যণীয় বোশন, ওয়ার্কশপ এর বহু প্রাসাদ ষষ্ঠ গির্জায় স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্যের পরিচয় পাওয়া যায়।


📖মূল্যায়ন/রেনেসাঁস পদবাচ্য

ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের সংস্কৃতির চর্চা ছিল মদ্র পরিঘরে সাম্রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ এযুগের সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। এবং তাদের মধ্যে সংস্কৃতি চর্চার তেমন প্রভাবও ছিল না, তাই অনেক পন্ডিত ক্যারোলিঞ্জীয় যুগের সংস্কৃতি চর্চাকে পঞ্চদশ শতকে ইতালীয় রেনেসাঁসের পরিপ্রেক্ষিতে রেনেসাঁস বলতে রাজি নয়। কিন্তু ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর পশ্চিম ইউরোপের ধ্রুপদী সংস্কৃতির পতন ঘটেছিল। এবং শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চা আর স্তব্দ হয়ে পড়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দের পর যখন পশ্চিম ইউরোপে এক অন্ধকারাচ্ছন্দ পরিস্থিতি বিরাজমান তখন শার্লামেনের আগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষা সংস্কৃতির চর্চা আলোর বাতি জ্বলে ওঠে। ‌ মতো প্রায় সংস্কৃতি চর্চাকে জীবন্ত করে শার্লামেন শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চার নব চেতনা ও নতুন ধারার জন্ম দেন। তাই ক্যারোলিঞ্জীয় যুগে সংস্কৃতি চর্চাকে সুদূর পরিসরে হলেও রেনেসাঁস বলে অভিহিত করা যায়

............. সমাপ্তি...........


✍️লেখিকা পরিচিতি

নাম- জিয়াসমিন খাতুন
কলেজ - পাঁশকুরা বনমালী কলেজ
ইউনিভার্সিটি - বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি


👉তথ্যসূত্র

  1. Pavneet Singh, "International Relations ".
  2. Prakash Chandra, "international relations & comparative politics".
  3. Garrett W Brown, "The Concise Oxford Dictionary of Politics and International Relations ".

📜সম্পর্কিত বিষয়

  1. ওপেক কি ? | What is OPEC ? (আরো পড়ুন)
  2. সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (আরো পড়ুন)
  3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব  (আরো পড়ুন)
  4. ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ  (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
                     .......................................

    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐