প্রাচীন মিশরের সংস্কৃতি চর্চা
পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধি সভ্যতা হলো আফ্রিকার নীলনদের তীরবর্তী মিশরীয় সভ্যতা নব্য প্রস্তর যুগ থেকেই প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে মিশরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। তা সত্ত্বেও মিশরে প্রাচীন রাজবংশের (আমলে ৩২০০ থেকে ২১৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) মিশরীয় সংস্কৃতির উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়। শ্রমিকের রচনা থেকে জানা যায় এই সভ্যতাটি ছিল যে সেই যুগের অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে সংস্কৃতিক দিক থেকে অনেক উন্নত অগ্রগতির অধিকারী।
👉মিশরীয় লিখন পদ্ধতি
মিশরীয় লেখা |
মিশরীয়রা সম্ভবত প্রথম জাতি যারা লিখতে জানতো প্রাক বংশীয় যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দির ও রাজবাড়ীর হিসেব ঋণ বা অগ্রিম সংস্কৃতি হিসেবে এবং অবশ্যই জ্ঞান সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করে মনে রাখত। মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ গল্পে চিত্রগুলিকে আরো উন্নত করে তারা এক ধরনের চিত্রলিপি সৃষ্টি করে যাকে হায়ারোগ্লিপিক লিপি বলা হয়। হায়ারোগ্রিফিক বলতে মিশরীয় বুঝত পবিত্র লিপি। প্রায় ৭৫০টি চিত্রলিপি ব্যবহার করেই হায়ারোগ্লিফিক লিপি গড়ে উঠেছিল। এই লিপি প্রথম ডান দিক থেকে বাম দিকে লিখতে হত এবং কখনো কখনো বাম দিক থেকে ডান দিকে লিখতো। লেখার পদ্ধতিতে গত জটিলতা দূর করার জন্য তার অপভ্রংশ হিসেবে হায়ারোগ্লিফিক ও ডেমোটিক প্রচলন হয় প্রথম দিকে তারা কার্য পাথর, হাড়, দেয়ালের প্রাচীর, কাদা-মাটি, চামড়া প্রভৃতি উপাদান ব্যবহার করত। কিন্তু লেখার কাজ বৃদ্ধি পেলে প্যাগিরাস গাছের পাতার লিখতে শুরু করে। জল আটা ও কার্বন মিশিয়ে তারা প্র্যাকটিনাসের উপরে লেখার কালি তৈরি করে। ননখাগড়ার কলম দিয়ে লিখতো। তাদের বর্ণমালা লেখার উপকরণ সবকিছুই মিশরীয় সভ্যতাকে এক উন্নত সুশিক্ষিত সভ্যতা হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল।
👉শিক্ষার অগ্রগতি
প্রাচীন মিশরীয়রা শাসন কার্য চালানোর জন্য নির্মাণ কাজ তদারকি করার জন্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ হয়। শিক্ষা বিস্তারের জন্য তারা বিদ্যালয় নির্মাণ করে তবে উচ্চ পদস্থ কর্মচারী আমলা অভিজাতীয় পুরোহিতের সন্তানেরাই শিক্ষা লাভের সুযোগ পেতো। প্রধানত পুরোহিতরাই ছিল শিক্ষা দাতা, প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে শিশুদের শিক্ষাদান করা হতো। ছাত্রদের ভুল-ত্রুটি ও শিশুদের সংশোধিত লেখা পত্র এবং ছাত্রদের প্রদত্ত শিশুদের নানা উপদেশের নিদর্শন বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারের মধ্য দিয়ে মিশরীয় শিক্ষার আলো সমসাময়িক প্যালেস্টাইন, ফিনিশিয়, ক্সিট, লিডিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
👉মিশরীয় সাহিত্য
মিশরের সাহিত্যের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে পিরামিড মন্দির সমাধি ক্ষেত্রের গায়েও প্যাপিরাসের পাতায় সাধারণত মিশরীয় সাহিত্য পদ্ম ছন্দে লেখা হতো, তবে গদ্য সাহিত্যের ও নিদর্শন আছে। তাদের সাহিত্যের মূল বিষয়বস্তু ছিল ধর্মড় যাদু বিদ্যা, পৌরাণিক কাহিনী ও রূপকথার সিনহার, রূপকথার মেম ফাইট, ভ্রামা ইসনাটন প্রভৃতি মিশরীয় ও সাহিত্য চর্চার লেখক যোগ্য নিদর্শন প্রেমের কাহিনী বীরগাথা গ্রামীণ ছড়া মিশরীয় সাহিত্যচর্চার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
👉মিশরীয় সভ্যতার ধর্ম
মিশরীয় দেবী |
মিশরীয় দেবতা |
মিশরের মিলন সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান সর্বত্র তাদের ধর্মবিশ্বাসের বিভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। মৃতদেহের সাথে প্যাপিরাসে লিখে সমাধিতে রাখা বইগুলোকে বুক অফ ডেথ বলা হয়। যা থেকে সেই যুগের ধর্মচর্চার সম্পর্কে অনেক কথা জানা যায়। সাধারণত তারা বহু ঈশ্বর বিশ্বাস করত, তবে একটা সময় তারা একেশ্বরবাদী হয়ে ওঠে। তাদের ধর্মবিশ্বাসে ভূত-পেত, অশরীর, উপখ্যাত ও যাদুবিদ্যার যথেষ্ট স্থান ছিল। অলৌকিক ও প্রাকৃতিক শক্তির ভয়ে ভিত্ত মিশরীয় ওদের মধ্যে ধর্মের উৎপত্তি ঘটে। ঝড়, বৃষ্টি, বর্জ্য, বন্যা, সূর্য, চাঁদ, সাপ, বাঘ, সিংহ প্রভৃতি প্রভৃতির উপাসনা করতো তুষ্ট করার জন্য তাদের প্রধান দেবতা ছিল সূর্য যার নাম ছিল আগমনেরে আকাশের দেবী জুল দেবতা। আই বিষ বায়ুমণ্ডলের দেবতা অনোরিস, মৃতের দেবতা অপুবিস প্রবৃতি উল্লেখযোগ্য মিশরীয়দের চোখে। রাজা বা ঘোরাতে ছিলেন অন্যতম দেবতা এবং সূর্য দেবতা এবং সূর্যদেব তাদের প্রতিনিধি মিশরীয় বিশ্বাস করত ঘোড়াও এর মৃতদেহকে সমাধিতে মমি করে সংরক্ষিত করে রাখতে রাজ বংশের সমৃদ্ধি বাড়বে।
👉 মিশরীয় স্থাপত্য
মিশরীয়দের স্থাপত্যের নিদর্শন হল মন্দির, সমাধি, প্রাসাদ, স্মৃতিসৌধ ও পিরামিডের মিশরীয় ও মন্দিরগুলি ছিল ছবি সাল আকৃতির, যেমন- কনাকও লোকে জরের মন্দির। তবে মিশরীয় স্থাপত্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো পিরামিড। মৃত ব্যক্তির সমাধি ক্ষেত্রের মূল্যবান জিনিসপত্র সুরক্ষিত করার প্রয়োজনে থেকেই ভারী ভারী পাথর দিয়ে পিরামিড সমাধি সৌধ নিয়নি করেছিল। তাদের নির্মিত পিরামিড গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কুফু, মন, তাওবা ও তুথেন খামেন পিরামিড। I. E. Sed word বলেছেন যে- বড় বড় পিরামিড নির্মাণের মূল লক্ষ্য ছিল কোরাও এর উপর দেবত্ব আরোপ করা।
👉 মিশরীয় ভাস্কর্য
স্ফিংস |
পিরামিড ও মন্দিরের সাথে অলংকরণ ছিল সে যুগের ভাস্কর্য নিদর্শন। ফেরাওদের স্মৃতি নির্মাণ করে তাকে জীবন্ত রূপ দেওয়ার জন্য মূর্তিগুলি চোখে স্ফটিক পাথর বানিয়ে দিত। মানুষ ও পশুর মিশ্রণে স্মৃতি নির্মাণ ছিল। অন্যতম ভাস্কর্য শিল্প গির্জার পিরামিডের কাছে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছিল। বিশাল আকৃতির স্ফিংস এর হার দেহ ছিলো সিংহের মতো, কিন্তু মাথা মানুষের মতো। এটি ছিল মিশরীয় ফেরাওদের আধিপত্য শক্তি ও মর্যাদার প্রতীক।
👉 মিশরীয় চিত্রকলা
চিত্রশিল্প |
মিশরীয় চিত্রশিল্প ছিল ধর্ম কেন্দ্রিক ও ধর্মীয় প্রভাব যুক্ত। চিত্র শিল্পীরা ডিম, আটা, মোম ব্যবহার করে দেওয়ার চিত্র অঙ্কন করত সাদা ও কালো রং ব্যবহার করে। প্রাকৃতিক বিষয়ে সমুদ্রের ঢেউ খেলানো বস্ত্র বয়ন করত। ফেরাওদের বিলাসী জীবন থেকে সাধারণ মানুষের সহজ সরল জীবন চিত্রশিল্পে ফুটিয়ে তুলত।
👉 মিশরের বিজ্ঞান চর্চা
জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রে মিশরীয়রা খুবই উন্নত ছিল। চন্দ্রের অবস্থার লক্ষ্য করে তারা চন্দ্র পত্রিকা তৈরি করেছিল, পরে তার দোষ ত্রুটি দূর করে সৌর পঞ্জিকা তৈরি করে। তারাই ৩৬৮ দিন বছরে এই বর্ষ গণনা চালু করেন। ছায়া ঘড়ি, জল ঘড়ি নির্মাণ করে সময় নির্ণয়ের ব্যবস্থা করেন। তারাই প্রথম ডালি পালন ব্যবহার ওজন পদ্ধতি আবিষ্কার করে, প্রথমদিকে যাদুবিদ্যার দ্বারা রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করলেও পরবর্তীকালে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা প্রভৃতি সাহায্যের চোখ, দাঁত, পেটে রোগ ও স্বর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা করে মমি তৈরি ক্ষেত্রেও তাদের দক্ষ চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। মৃতদেহের প্রাণ রোধ করার জন্য নানার রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করতো।
📖 মূল্যায়ন
মিশরীয় সভ্যতা সামরিক অর্থে একটি উন্নত সভ্যতা। জলসেচ প্রভৃতি মৃতশিল্প এর কাজ কাগজ নির্মাণে তারাই পথপ্রদর্শক জ্যোতিবিদ্যা। গণিত, সাহিত্য, চিকিৎসা, বিদ্যা ও সর্বোপরি পিরামিড নির্মাণের তারা যে সৃষ্টির পথ দেখিয়েছে তা বিশ্বের পরবর্তী সভ্যতাগুলিকে বিকশিত করতে এবং বিন্দুকে সুন্দর ও সজ্জিত করে তুলতে বিশেষ অবদান রাখে।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉তথ্যসূত্র
- Pavneet Singh, "International Relations ".
- Prakash Chandra, "international relations & comparative politics".
- Garrett W Brown, "The Concise Oxford Dictionary of Politics and International Relations ".
📜সম্পর্কিত বিষয়
- ওপেক কি ? | What is OPEC ? (আরো পড়ুন)।
- সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (আরো পড়ুন)।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)।
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।