উমাইয়া শাসনকালে সমাজে সংস্কৃতি আলোচনা করো

উমাইয়া বংশের খলিফারা ৬৬১ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। উমাইয়া খলিফাদের শাসনকালে ইসলামী ও শাসন ব্যবস্থার শুধু নয় এযুগে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘটে। বিশেষত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় পরিলক্ষিত হয়।

উমাইয়া শাসনকালে সমাজে সংস্কৃতি আলোচনা করো
উমাইয়া শাসনকালে
Source- click here 


👉সমাজ ও সামাজিক অবস্থা

উমাইয়া খিলাফতের পূর্ব রশিদুন খিলাফতের আমলে প্রচলিত সহজ সরল ও আরাম্ভর জীবনযাত্রার বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। এই পর্বের সমাজ ব্যবস্থায় শ্রেণী বৈষম্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমগ্র সমাজ প্রধানত চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সামাজিক ব্যবস্থার সর্বোচ্চ অবস্থান করতেন খলিফা পরিবার ও অভিজাত শ্রেণি। তা শরীয়ত আইন মেনে জীবন যাপন করলেও খলীফাদের চরিত্রে নৈতিক অবনতি ঘটে। ঐতিহাসিক পি.কে. হিস্ট্রি-র বিবরণ থেকে জানা যায় খলিফা ইয়াজিব মদ্যপান করতেন। এই সময় খলিফারা দানাস্কাস থেকে দূরে মরুভূমি সন্নিভূত মরুদ্দানে দুর্গ নির্মাণ করে বিলাসবহুল জীবনযাত্রা আমোদ প্রমোদে লিপ্ত থাকতেন পাশা খেলা, মোরগের লড়াই শিকার যাত্রা। তাদের অবসর বিনোদনের মাধ্যম ছিল রাজ পরিবারের ব্যক্তিবর্গ ও অভিজাতরা ব্যয়বহুল পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করতেন। খলিফা পরিবার ও অভিজাত সমাজে নারীরা যথেষ্ট স্বাধীনতা ও প্রভাব প্রতিপত্তি ভোগ করতেন। তবে নারীদের মধ্যে পর্দা প্রথার প্রচলন ছিল।

সামাজিক কাঠামোর দ্বিতীয় শ্রেণীতে ছিলও নব দীক্ষিত ধর্মান্তরিত মুসলিমগণ বা মাওয়ালী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এদের পূর্ণ নাগরিকত্ব ছিল না। এবং সেমিয়া কর প্রধান করতে হত। এদের মধ্যে আবার প্রবল বৈষম্য ছিল খলিফার দ্বিতীয় ওমর বৈষম্য নিরশনে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তবে মাওয়ালী ধীরে ধীরে সমাজ ও সংস্কৃতি নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হয় এবং তার জন্য প্রথম শ্রেণীর সঙ্গে সামাজিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়।

সমাজ ব্যবস্থার তৃতীয় শ্রেণীতে ছিল ইহুদী, পারসিক, খ্রিস্টান ও অন্যান্য-অমুসলিম সম্প্রদায়ের জনগণ যারা জিম্মি নামে পরিচিত। তারা সমাজের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো, তবে খরাজ বা ভূমি রাজস্ব প্রদান করতে বাধ্য ছিল। বিচার ব্যবস্থা ও তাদের নিজেদের ধর্মীয় প্রথা পদ্ধতি মেনে চলার অধিকার ছিল উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল- এই যে খ্রিস্টানরা অর্থ সচিব, কবি, চিকিৎসক প্রভৃতি। রাজসভার উচ্চপদে নিযুক্ত হয়েছিলেন এমনকি খলিফা, মুয়াবিয়ার স্ত্রী খ্রিস্টান ধর্ম বিলম্বী ছিলেন।

সুমাইয়া শাসনকালে সমাজের চতুর্থ ও সর্বনিম্ন শ্রেণিতে ছিল ক্রীতদাস। যুদ্ধ বন্দীদের দাস হিসেবে নিয়োগ করার ফলে সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শরীয়ত অনুযায়ী মুসলিমরা বহুধর্মীদের দাস হিসেবে নিয়োগ করতে পারত না। প্রভু ও মহিলা দাসের সন্তান দাস হিসেবে বিবেচিত হতো না। তাদের মুক্তি দেওয়ার সমাজে মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো। মুক্তিপ্রাপ্ত দাস প্রভুর অনুচারের মর্যাদা পেতো।

উমাইয়া যুগের সমাজে নারীদের অবস্থার বিষয়টি বিশেষ তাৎপর্য ছিল। পরিবার ও সমাজের নারীদের মর্যাদা প্রতিপত্তি ছিল। রাজ পরিবারের নারীরা নাচ, গান ও সংস্কৃত চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা নিত। খলিফা প্রথম ইয়াজিদের কন্যা অতিকা সেই যুগের সংস্কৃতি চর্চায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। উমাইয়া আমলে প্রথম দিকে নারীরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন, যেমন মুয়াবিয়ার স্ত্রী ও ভগিনী মহাবিহার রাজ পরিবারের মহিলাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ নেওয়াকে স্বেচ্ছাধীন করেন। যাইহোক সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে শাসনকালে বিকৃতি দেওয়া হয়।


👉উমাইয়া আমলের সংস্কৃতি চর্চা

উমাইয়া শাসনকালে সংস্কৃতি চর্চার পূর্বক স্থান ছিল মক্কা, মদিনা, বসরা, কুফা ও ইয়াক। সেই যুগের সংস্কৃতি চর্চা ছিল প্রধান ইসলাম ধর্মকেন্দ্রিক।


👉আরবি ভাষা সাহিত্য চর্চা

উমাইয়া শাসনকালে  আরবি ভাষা শিক্ষার ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়। কারণ প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালিত হতো আরবি ভাষার মাধ্যমে। আব্দ-অল মালিকের সময়কাল থেকে দামাস্কাসের মহাফেজ খানা আরবি ভাষায় চালু করা হয়। এরা কেউ আরবি ভাষা চালু হয় এযুগের আরবি ভাষা, সাহিত্য, ব্যাকরণ চর্চায় প্রভিত উন্নতি ঘটে। আরবি কাব্যচর্চায় প্রেম-ভালবাসা, প্রাণের বন্ধন প্রভৃতি ছিল বিষয়বস্তু। এই যুগে ওমর, ইবন, হামদার্দ, জামিল প্রমুখ প্রেমের কবিতা রচনা করে খ্যাতি লাভ করে। কবি জামিল লাইলা মজনুর প্রেম কাহিনী রচনা করে খ্যাতি লাভ করে। কবি মিসকিন অল দারিমি কাব্য লেখেন, খলিল ইবন আহমেদ কিতাবুল আইন নামে আরবি অভিধান রচনা করেন। হযরত আলীর উৎসাহে আবুল আসওয়াদ অল দুয়ালী ব্যাকরণ রচনা করেন। খালিদ বিন ইয়াজিদ বিভিন্ন গৃহ খ্রিস্টান চিকিৎসা শাস্ত্র ও জ্যোতিষ শাস্ত্রের গ্রন্থ আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন। এই যুগে আরবি ভাষা সাহিত্য ব্যাকরণ চর্চায় উন্নতি ঘটে।


👉হাদিস চর্চা

উমাইয়া আমলে হাদিস চর্চার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। অনাস ইবন মালিক এবং আব্দুল্লাহ ইবন, উমর ইরন, অল খাতাব ছিলেন হাদিস চর্চায় সুপণ্ডিত। এই সময় হাদিস চর্চায় মদিনায় ছিল এক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র। কুফার বিখ্যাত পন্ডিত অল শবি, আমির ইবন, সারাইল ও আব্দুল্লাহ ইবন মাসুদ চর্চায় পান্ডিত্যের পরিচয় দেন। আব্দুল্লাহ ইবন অল আব্বাস ছিলেন কোরআন শরীয়ত ও হাদিস চর্জায় বিখ্যাত পন্ডিত।


👉ইতিহাস চর্চা

উমাইয়া আমিন থেকে শাসন আরবি ইতিহাস চর্চা শুরু হয়। শাসন কার্যের প্রয়োজনী এবং শাসন শ্রেণীর বংশানু চরিত জানার প্রয়োজন থেকে ইতিহাস চর্চা শুরু হয়। এই যুগে পুরনো তথ্য সামগ্রী লিপিবদ্ধ করা জীবনী গ্রন্থ রচনা ইসলামিক সাম্রাজ্যের বিজয় গৌরব রচনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন আরোপ লোককাহিনীর আরবের ইতিহাস লক্ষ্য করা যায়।


👉কবিতা ও সঙ্গীত চর্চা

কবিতা ও সংগীত চর্চা ছিল আরব সংস্কৃতির অঙ্গ চরণ কবিদের কবিতা থেকে তারা গীত কাব্যের সূচনা হয়। এই সময় প্রেমের কবিতা ও রাজনৈতিক রচনা শুরু হয়। কবিতাকে সংগীতের মতো করে গাওয়া হতো। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ধর্মীয় সভা এমনকি উটের পিঠে যাতায়াতের সময় ক্লান্তি দূর করতে গীত গাওয়া হত ‌। এই যুগের বিখ্যাত সংগীত কার ছিলেন এবং মিস যাহন যিনি কার্জন টাইম পারসিক সংগীত চর্চার ধারা আরব সঙ্গীত চর্চায় প্রবর্তন করেন। খলিফা দ্বিতীয় ইয়াজিদের নরত্তকি সাল্লাসা ও হাবিবা প্রসিদ্ধ গায়িকা ছিলেন।


👉স্থাপত্য শিল্প

উমাইয়া শাসনকালে স্থাপত্য শিল্পে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে। এই যুগে মূলত মসজিদ ও ধর্ম স্থানে কেন্দ্র করে স্থাপত্য নির্মিত হয়। এই যুগের দুটি বিখ্যাত স্থাপত্য নিদর্শন হলো তামাশকের জামিত মসজিদ ও ডোম অফ দি রক মসজিদ। এইসব মসজিদ নির্মাণের স্তম্ভ যুক্ত খিলান মিনার ব্যবহার করা হতো। এই যুগের স্থাপত্য ছিল অলংকৃত সৌন্দর্যশীল ও আরম্ভর পূর্ণ উমাইয়া শাসনকালে নির্মিত। জর্জ জনমাশাটা কাছের আমরা লোকালয়ের অঞ্জার  প্যানেস্টাইনের খিরবাত আলমাকজার ও সিরিয়ার কাসর অল হাইয়ের প্রভৃতি প্রাসাদ ছিল সেযুগের স্থাপত্য শিল্পের সুদৃশ্য নিদর্শন।


📖 মূল্যায়ন

আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, আরবের ইতিহাস উমাইয়া শাসনকাল এক স্বতন্ত্র অধ্যায়। এই যুগের খলিফাদের শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চার আগ্রহ, আরম্ভ প্রিয়তা সাম্রাজ্যের প্রিয়তা, শান্তির শৃঙ্খলা সংস্কৃতি চর্চাকে সমৃদ্ধ করেছিল। তাই বলা যায় উমাইয়া আমলের শিক্ষা চর্চা তাদের সাহিত্যিক আয়তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য ছিল।

............. সমাপ্তি...........


✍️লেখিকা পরিচিতি

নাম- জিয়াসমিন খাতুন
কলেজ - পাঁশকুরা বনমালী কলেজ
ইউনিভার্সিটি - বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি


👉তথ্যসূত্র

  1. Pavneet Singh, "International Relations ".
  2. Prakash Chandra, "international relations & comparative politics".
  3. Garrett W Brown, "The Concise Oxford Dictionary of Politics and International Relations ".

📜সম্পর্কিত বিষয়

  1. ওপেক কি ? | What is OPEC ? (আরো পড়ুন)
  2. সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (আরো পড়ুন)
  3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব  (আরো পড়ুন)
  4. ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ  (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
                     .......................................

    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐