উমাইয়া খিলাফতের পতনের পর ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আবুল আব্বাস কৃতিক আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠিত হয়। সাম্রাজ্যের সর্বত্র জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প কলা, সামাজিক ও বৌদ্ধিক জীবনে প্রভূত উন্নতি ঘটে। অবশেষে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গল নেতা ফলাবু খান শেষ সাব্বাসীয় খলিফা অল মোহ তাসিনকে হত্যা করে ও বাগদা ধ্বংস করলে আব্বাসীয় রাজত্বের অবসান ঘটে। আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের জন্য সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার জন্য বহিরাগত বেশ কিছু কারণ স্থায়ী ছিল।
📖 অভ্যন্তরীণ কারণ
👉 খলিফাদের অযোগ্যতা
আব্বাসীয় খলিফাদের ৫০০ বছরের শাসনকালে ৩৭ জন খলিফার মধ্যে অনমনসুর ফারুন -হারন অল রহিদ অল মামুদ ছিলেন সুযোগ্য শাসক মুতাসিম এর পরবর্তী খলিফাদের অধিকাংশ ছিল অকর্ম ও দুর্বল ও অযোগ্য শাসক, তারা রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার দিকে নজর না দিয়ে বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। মন্ত্রী পুঁজির আমিরা, আমিয়রা প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে নিজে নিজে স্বার্থের চরিত্রর্থ করার জন্য সুশাসনের বিরোধী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে খলিফা ও ওয়াশিকের শাসনকাল থেকে আব্বাসীয় খলিফা তন্ত্রে অবক্ষয়ের সূচনা হয়।
👉সাম্রাজ্যের বিশালতা
আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ও আটলান্টিক থেকে সুদূর নীলনদ ক্যাম্পিয়ন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বিচিত্র অঞ্চল আরো পারসিক তুর্কি মগবেড়ি প্রভৃতি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ইসলামিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়, কিন্তু এই বিশাল সাম্রাজ্য কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল অযোগ্য খলিফাদের আমলে সেরূপ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হয়নি, ফলে বিশাল সাম্রাজ্য খলিফাদের নিয়ন্ত্রণ ও অখণ্ড ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব হয়নি।
👉বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির উদ্ভব
বিশাল আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে ছোট ছোট রাজবংশের উত্থান ঘটে। এই রাজবংশ গুলি ছিল খলিফা বিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী। শক্তিশালী খলিফাদের আমলে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজবংশের গুলির খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলেও দুর্বল খলিফাদের আমলে তারা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হয়ে ওঠার ফলে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের অখন্ডতা ভেঙে পড়ে।
👉উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব
যেকোনো সাম্রাজ্যের পতনের পেছনে অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দেয় উত্তরাধিকারী দ্বন্দ্ব, আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি বা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি, তাই খলিফা পদে উত্তরাধিকারের জন্য খলিফা পরিবারের দ্বন্দ্ব সংঘাত গৃহযুদ্ধের ন্যায় বৃহত্তর সংকর দেখা দেয়। যেমন হারুন অল রশিদের পর খলিফা পদের দাবি নিয়ে তারা দুই পুত্র অল আমিন ও আলী মামুন এর মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পরবর্তীকালেও একাধিক বা উত্তরাধিকারী সংঘাত সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শান্তি ও সংহতিকে নষ্ট করে।
👉সামরিক দুর্বলতা
আব্বাসীয় খলিফা গণ সামরিক বিজয় অপেক্ষা শিক্ষা সংস্কৃতির চর্চায় অনেক বেশি মনোযোগী ছিলেন। সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি ও সামরিক বিজয় নীতি পরিত্যাগ করার কারণে সামরিক শক্তির অবক্ষয় ঘটে। সাম্রাজ্য পরিচালনায় সেনাবাহিনীর গুরুত্ব ও কমতে থাকে এমনকি সৈন্যদের নিয়মিত বেতন দেওয়া থেকেও বঞ্চিত করা হয়, ফলে সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলযোগ তাদের বিদ্রোহী মনোভাব সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, এমনকি সৈন্যরা খলিফা অল মুতাজকে হত্যা করতে কুন্ঠা বোধ করেনি, সুতরাং সামরিক অক্ষমতা ও সামরিক অবস্থা দুর্বলতা, আব্বাসীয় খলীফাদের পতনের অন্যতম কারণ।
👉জাতি গোষ্ঠীগত সংঘাত
জাতি গোষ্ঠীও বিভেদ আব্বাসীয় খিলাফতের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন আব্বাসীয় আমলে আব্বাসীয় ও আরব জাতির মধ্যে বিরোধ চূড়ান্ত রূপ নেয় হিমাইয়া ও মুদারিয়া গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব আরব পারসিকদের মধ্যে যুদ্ধের সাম্রাজ্যের শান্তির শৃঙ্খলা সংহতি নষ্ট করে। সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। এছাড়া সুন্নি, শিয়া, মুতাজিলা, কারামতি প্রভৃতি ইসলামিয়া সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে বলিয়ন হলে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয়ে উঠে।
👉অর্থনৈতিক অবক্ষয়
📖বহিরাগত কারণ
👉মঙ্গল আক্রমণ
অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারণে যখন আব্বাসীয় সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে তখন মঙ্গল আক্রমণ আব্বাসীয়দের পতন অনিবার্য ও সুনিশ্চিত করে ইতিমধ্যেই বাহমান টাইমদের বারবার আক্রমণ ও পরপর ক্রুসেড (ধর্মযুদ্ধ) জনিত আক্রমণ আব্বাসীয় সাম্রাজ্যেকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। অবশেষে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গল নেতা হলাগু আব্বাসীয়দের রাজধানী বাগদাদ আক্রমণ করে লুণ্ঠন ও ধ্বংস লীলা চালায়, সেই সঙ্গে খলিফা অল মহতাসীম কে হত্যা করেলে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের পতন করে।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"।
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"।
- V D Mahajan, "History of Medieval India".
📖সম্পর্কিত বিষয়
- মধ্যযুগীয় ভারতের ভক্তি আন্দোলনের উদ্ভব (আরও পড়ুন)।
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মনসবদারি ব্যবস্থা এবং পরবর্তীকালে জায়গির সংকট (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।