ধর্ম সংস্কার কারণ
যে খ্রিস্টান ধর্মে বুনিয়ার মধ্যযুগে এক বিস্তীর্ণ সময় ধরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল এবং যে রোম কেন্দ্রিক খ্রিস্টান ধর্ম ধ্বনি দরিদ্র নির্বিশেষে ইউরোপ মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তার বিরুদ্ধে জড়ালো প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতকে।
ষোড়শ শতকে ইউরোপের একটি পতিত্য ধর্ম সংস্থানের দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে যে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা রিফর্মেশন মুভমেন্ট বা ধর্ম সংস্কার আন্দোলন নামে পরিচিত। ষোড়শ শতকে তীব্রভাবে চার্জ বিরোধিতা পশ্চিম ইউরোপ দেশগুলিতে কৈম্য ব্যাপক আন্দোলনের রূপ লাভ করেছিল, সে সম্পর্কে বিভিন্ন কারণ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ রয়েছে।
চার্চ |
📖 গির্জা ও পোপের দুর্নীতি
👉প্রথমত:- চার্চ সম্পর্কে মধ্যযুগে মানুষের ধারণা ছিল ও চার্চ এবং ঈশ্বর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান যা শীর্ষে আছে স্বয়ং যীশু খ্রীষ্ট। মানুষ এটাও জানত যে, ধর্ম প্রতিষ্ঠান হলেও চার্চ একটি ব্যক্তির পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এবং সেই জন্য ধর্ম তা ব্যাপক হারে বা নৈতিকতা ক্ষয়প্রাপ্ত সাম্প্রতিক ছিল এরূপ মনোভাব মানুষের মধ্যে গড়ে উঠতে থাকে, সুতরাং খ্রিস্টান ধর্মে আদর্শ সঙ্গে চার্চের কাজকর্মে যে বিরাট পার্থক্য গড়ে উঠেছিল তা যতদূর সম্ভব কমানোর চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাবে চালিয়েছিল। ষোড়শ শতকের গোড়ায় খ্রিস্টান ধর্ম প্রতিষ্ঠান কালের নীতিহীনতা ও ক্ষমতা অপব্যবহার ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠান হিসেবে চার্চে আধ্যাত্মিক চরিত্রের দ্রুত অবক্ষয় মানুষের পক্ষে আর মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
👉দ্বিতীয়ত:- জর্জ একমাত্রই ধনী ব্যক্তি এ কথাটির কারণ ষোড়শ শতকে সাধারণ দরিদ্রদের মধ্যে অনেকেরই মধ্যে দিন দারিদ্র বাস করতেন তাদের অনেকেরই মধ্যে ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানপ্রায় ছিল না। লানকুসংস্কার বাসা বেধেছিল একাধিক ধর্মীয় সংগঠন থেকে উপসানালয়ে গির্জা যাজক ও বিষাদের দীর্ঘ অনুপস্থিত ধর্মের সংখ্যা রক্ষিতা রাখা আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডল নষ্ট করেছিল বলে ধর্ম সংস্কারগণ এরূপ ব্যাধি গুলি থেকে চার্চকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ষোড়শ শতকে সেই চেষ্টা আন্দোলনে পরিণত হয়।
👉তৃতীয়ত:- রাইস এর মতে পোপ পদে মর্যাদা রেনেসাঁসের অনেক আগে নবম ও দশম শতকে ভূগঠিত করেছিল, ক্রমে পোপের অমর্যাদা আরো বেশি করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো। পোপের কাছে বিচার বিভাগ শুধু অর্থ উপাদান দপ্তর হয়েছিল, কারণ ধর্ম বিষয়ে যাবতীয় বিতর্কে মীমাংসার জন্য পোপের কাছে সালিশি ব্যবস্থা করতে হতো। এছাড়া চার্চে ধর্ম কর ধর্মীয় আইন ভঙ্গ কারীর কাছে ছাড়পত্রে বিক্রি খুন অপরাধে প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য মার্জনা পত্র বিক্রির মাধ্যমে প্রচুর অর্থ আদায় করতো। এসবের মাধ্যমে পোপের ও খ্রিস্টান চার্চকে ধর্মীয় অর্থনৈতিকতা অধর্ম মানুষের কাছে ক্রমে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল
পোপ |
📖 পঞ্চম ও ষোড়শ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত সময়ে ধর্ম প্রতি খ্রিস্টানদের মধ্যে এই বীরমা তৈরি হয় নিয়ে চার্চের মধ্যে এক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে চার্চকে যথেষ্ট স্মৃতিশীল বলে মনে হতো। সেই জন্য চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে চার্চ বিরোধী ইংল্যান্ডের লোট ও বোহেমিয়ার ফুসসাইড আন্দোলন চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ক্যাথলিক চার্চে নানান অনুষ্ঠান শোভাযাত্রা একত্রে উপাসনা দ্রব্য দৃশ্যে অবতারণা সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ করত। চার্চ বাদে ধর্ম বহির্ভূত সংগঠনের যোগ দিয়ে সেবামূলক কাজ তাদের মৃত্যুর পর আত্মার শান্তি কামনা প্রার্থনা করা সমাধিত করা, মৃত্যু সদশেসং ব্যবহার ও পবিত্র জীবনের লেখা সেন্ট পিটার গির্জার প্রতি মানুষের সামনে তুলে ধরতে মানুষের মধ্যে চার্জ ও ধর্ম জীবন সম্পর্কে যে প্রবল প্রস্থানগুলিতে হাজার হাজার পুনরার্থী সমাবেশ।
📖 ধর্মজীবন ও চার্চে কার্যকলাপ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল ষোড়শ শতকে এজন্যই পোপ হয়ে উঠেছিল সে মানুষ ধর্ম সংস্কারে উৎসাহিত হয়েছিল।
👉 রাজনৈতিক কারণ
পোপের পার্থিব ক্ষমতার বৃদ্ধি চেষ্টার ফলে খ্রিস্টান চার্চ ও রাষ্ট্রশক্তির মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা এবং ক্রমবর্ধমান প্রভাব কোন শাসকের সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। মধ্যযুগ থেকে চার্চ সম্প্রতি ও মুক্ত করে ঘোষনা এবং সাধারণ নাগরিকদের ধর্মকরদের সহ্য করা ও কোনটাই স্থানীয় শাসকদের পছন্দ ছিল না। ষোড়শ শতকে রাষ্ট্রশক্তি ক্ষমতা কেন্দ্র করার দিকে ঝুঁকেছিল এবং এর ফলে ইতালিতে পোপের পার্থিব ক্ষমতা বৃদ্ধি উদ্যান রাষ্ট্র ও চার্চের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি করেছিল।
👉পরিনির্যাতন
পঞ্চদশ শতকে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস থেকে জন্ম নিয়েছিল নারীদের উপর নিপীড়ন যাকে বলা হতো অনেক সময় নারীদের ভাইনি অনুবাদ দিয়ে তাদের উপর অত্যাচার করে হত্যা করা হতো, যা সমাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতো। এভাবে অসহায় নির্দোষ মহিলাদের ওপর চার্চের অত্যাচার বহু মানুষকে খ্রিস্টান ধর্মের সংস্কার সাধনে উৎসাহিত করেছিল।
👉ইহুদি বিরোধিতা:---
খ্রিষ্টান চার্চের আক্রমণে অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইহুদিরা স্পেন ও পর্তুগাল শাসকরা ধর্মীয় আবেগ ইহুদিদের দেশ থেকে বিস্তারিত করেছিল। ইহুদি বিরোধী মনোভাব তৎকালীন ইউরোপীয় শাসকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে চার্চের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। সেখানে ধর্ম তত্ত্ববিদ ও আইনজীবী একত্রিত হয়ে ইহুদি খ্রিস্টান শিশু হত্যাকারী রূপে বর্ণনা করেন, যার ফলে সেখানে ইহুদি আন্দোলন ও হত্যা শুরু হয়েছিল।
মধ্য যুগ থেকে প্রাক আধুনিক যুগে উত্তর-পূর্ব খ্রিস্টান ধর্ম ও সংগঠন সম্পর্কে মানুষের সমালোচনা ছিল না এবং তারা জর্জ পদে অপয়া দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। এই ধারণা সঠিক নয়।।
📖পরিশেষে বলা যায় যে, ষোড়শ শতকের সূচনা থেকে খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করে চার্চের সংস্কারের জন্য সজাগ হতে দেখা যায়। এই অবস্থা নবজাগরণ মানুষের মনে যুক্তিবাদ ও জীবন সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। মানুষ পোপের একচেটিয়া কৃতিত্ব ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে শুরু করে। মুদ্রণ বিপ্লব তরুণ সর্বসাধারণের কাছে বাইবেলের শিক্ষা পৌঁছে গেলে বাইবেল ধর্ম যাজকদের নীতি নির্দেশ পার্থক্য হয়ে ওঠে, ফলে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন সর্বশ্রেনীর মানুষদের উৎসাহিত করে।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉তথ্যসূত্র
- Pavneet Singh, "International Relations ".
- Prakash Chandra, "international relations & comparative politics".
- Garrett W Brown, "The Concise Oxford Dictionary of Politics and International Relations ".
📜সম্পর্কিত বিষয়
- ওপেক কি ? | What is OPEC ? (আরো পড়ুন)।
- সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (আরো পড়ুন)।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)।
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।