আদি মধ্যযুগের সুদূর দক্ষিণের প্রাচীনতম রাজ্য গুলির মধ্যে চোল রাজ্যগুলি অন্যতম। নবম শতকের মধ্যভাগ থেকে তামিল অঞ্চলের চোল শাসনের সূত্রপাত হয় এবং তেরো শতকের মধ্যভাগে চোল শাসনের অবসান ঘটে। চোল রাজা রাজ বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলে, আর অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি শিল্প বাণিজ্য। বাণিজ্যের প্রয়োজনে চোল আমলের মুদ্রার মাধ্যমে পণ্য বিনিময় প্রসার লাভ করে, ফলে চোল যুগের শক্তিশালী মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
👉প্রচলিত মুদ্রার সমূহ
চোল রাজারা স্বনামে বা স্বঅভিধায় সোনা রুপা ও তামার বহু মুদ্রা প্রচলন করেন। সে যুগের প্রচলিত মুদ্রা গুলির মধ্যে তিনটি শ্রেণি ছিল কাশু ,মাড় বা মাড়ৈ ও অচচু। এছাড়া পন দিনার, লিস্ক, তিরম, কানম, পন প্রভৃতি মুদ্রাও প্রচলিত ছিল। চোল যুগের লেখকের সুবর্ণ কলঞ্চুর উল্লেখ আছে। কলঞ্চু হল মূল্য বা ওজনের একক।
👉কাশু
কাশু হল চোল আমলের সোনা ও তামা উভয়ের ধাতুর মুদ্রা এই শ্রেণীর মুদ্রার আবার বিভিন্ন ভাগ ছিল, যথা-রাজ রাজন কাশু , রাজেন্দ্রশোলোন কাশু , কাশু শোলিয় কাশু, ধীর পাণ্ড কাশু ইত্যাদি।
👉মাড় বা মাড়ৈ
চোল আমলে প্রচলিত এক ধরনের সুবর্ণ মুদ্রা মাড় বা মাড়ৈ নামে পরিচিত। মাড় এক ধরনের রুপমুদ্রা হলেও চোল আমলে তা ছিল কেবল স্বর্ন মুদ্রা। এই শ্রেণীর মুদ্রা মধুরাকান্ত মাড়ৈ, ত্যাগবিনোদন মাড়ৈ, পলমুল্লি মাড়ৈ ,পলবন্ন মাড়ৈ, রাজারাজ মাড়ৈ, রাজেন্দ্র চোল মাড়ৈ, ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল।
👉অচচু
চোল আমলে বিশেষ এক শ্রেণীর সোনা রুপা ও তামার মুদ্রার নাম অচচু। এই মুদ্রা আবার আনৈ অচচু, অলশোম্পাদি অচচু, শলাগৈ অচচু, উন্ডি অচচু,অমুদ্রন অচচু সিয়ঙ্কি প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত ছিল।
📖বৈশিষ্ট্য:---
১ চোল মুদ্রাই প্রায় ব্যাঘ্র মৎস্য ও ধনুকের ছবি অঙ্কিত হতে দেখা যায়। ব্যাঘ্র চোলদের মৎস্য পান্ডদের ও ধনুক চেরদের প্রতীক।
২ চোল রাজ্য পুরানো মুদ্রার সঙ্গে নতুন মুদ্রা সমভাবে প্রচলিত ছিল, যেমন মধুরান্তকন- মাড়ৈ উত্তম চোল বা প্রথম রাজেন্দ্র চোল উৎকীর্ণ করেন। এই মুদ্রা প্রথম কুলোতুঙ্গের রাজত্বকালে ও প্রচলিত ছিল।
৩ বেঙ্গি পান্ড প্রভৃতি প্রতিবেশী রাজ্যের মুদ্রা এবং শ্রীলঙ্কীয় ঈলক কান্ড মুদরা অচল রাজ্য প্রচলিত ছিল। একাদশ শতকের একটি লেখতে চানক কনকন বা চৈনিক মুদ্রার প্রচলন এর উল্লেখ আছে।
৪ চোল রাজ্য বিভিন্ন শ্রেণীর মুদ্রার আনুপাতিক মান সুনির্দিষ্ট ছিল না, যেমন- এক সুবর্ণ কাশুকে কখনো ৫ কলঞ্জুচুর সমতুল্য আবার কখনো ১ বা কলঙ্কুর সমতুল্য বলা হয়েছে। আবার ১ সুবর্ণ কাশু মুদ্রা কে কখনো ৬টি কখনো ৭টি রৌপ্য মুদ্রার সমান বলা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, চোল আমলের মুদ্রা ব্যবস্থা কেবল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে না, এটি চোল রাজাদের রাজনৈতিক শক্তি ও অধিপত্য বিস্তারের প্রমাণ দেয়।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"।
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"।
- V D Mahajan, "History of Medieval India".
📖সম্পর্কিত বিষয়
- মধ্যযুগীয় ভারতের ভক্তি আন্দোলনের উদ্ভব (আরও পড়ুন)।
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মনসবদারি ব্যবস্থা এবং পরবর্তীকালে জায়গির সংকট (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।