শিল্পী কারিগরদের সংগঠনকে বলা হয় গিল্ড। আদি মধ্যযুগে উত্তর ভারতে গিল্ডগুলি অবক্ষয় ঘটলে ও দক্ষিণ ভারতে গিল্ড ব্যবস্থা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। তবে মধ্যযুগের ইউরোপে যে ধরনের গিল্ড ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল ও কার্যকলাপ চালাত সেই তুলনায় আদি মধ্যযুগীয় ভারতের গিল্ড ব্যবস্থা ছিল সংকীর্ণ এবং সীমাবদ্ধ। আদি মধ্যযুগের শিল্পী ও কারিগর শ্রেণীর কার্যকলাপ পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ ও সদস্যদের স্বার্থ বজায় রাখার জন্য গিল্ডগুলি গড়ে ওঠে। আধি মধ্যযুগের বিভিন্ন লেখ মালা ধর্ম স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন তথ্যসূত্রে গিল্ড বা শ্রেণীর কথা উল্লেখিত আছে।
শিল্পী কারিগরদের সংগঠন |
👉বিভিন্ন ধরনের গিল্ড সংগঠন
আদি মধ্যযুগের বিভিন্ন লেখমালায় ভিন্ন ভিন্ন গিল্ড ও শ্রেণীর কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন গোপগিরিতে আধুনিক (গোয়লিওর ) প্রাপ্ত ৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুটি লেখতে অত্যন্ত ২০ জন তৈলিক প্রধান ও ১৪ জন পালি ও মালাকারদের গোষ্ঠী প্রধানের উল্লেখ আছে। এছাড়া সূরা প্রস্তুতকারীদের শ্রেণী বা সংঘ ছিল এবং পাথরকাটা কারিগরদের সংগঠন ছিল। এভাবে দক্ষিণ ভারতে বিভিন্ন স্থানে শিল্পী ও কারিগরদের সংগঠন হিসেবে গিল্ডগুলি গড়ে ওঠে।
👉গিল্ডের সংগঠন
৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আদি মধ্যযুগের ভারতে গিল্ড গুলি সংঘটিত হয়েছিল। এক একটি অঞ্চলে এক এক ধরনের শিল্পকর্মে নিযুক্ত কারিগরদের নিয়ে। নিজেদের স্বার্থরক্ষা ও ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা ও শিল্প উৎপাদন মূলক কার্য কর্ম পরিচালনার জন্য গিল্ড গুলি সংঘটিত হয়েছিল। এক এক জন প্রধানের নেতৃত্বে এক একটি গিল্ড গঠিত হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি গিল্ড বা শ্রেণীতে একাধিক প্রধানকে দেখা যায়। যেমন গোপ গিরিতে তৈরি ও মালাকারদের সংগঠন বহু সংখ্যক প্রধান ছিল। তবে আদি মধ্যযুগের এক একটি অঞ্চলে একই বৃত্তিতে নিযুক্ত একাধিক সংগঠন ও গিল্ড গড়ে উঠেছিল। এরূপ ঘটনা গিল্ডগুলির মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করত।
👉গিল্ডের কার্যাবলী
গিল্ডগুলি কেবল বিভিন্ন বৃত্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় নয় বিভিন্ন ধরনের কার্য কর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল---
- একই ধরনের কার্যকর্ম ও বৃত্তিভিত্তিক গিল্ডগুলি সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করে চলত ।
- এক একটি অঞ্চলের গিল্ড সেই অঞ্চলের ব্যবসায়িক কার্যকর্ম পরিচালনা করতো। গিল্ডগুলি স্বশ্বাসিত হওয়ায় তাতে সরকারি হস্তক্ষেপ থাকতো না।
- জনকল্যাণকর কাজের জন্য গিল্ডগুলি অথালোগুলি করতো। সেই লগ্নিকৃত অর্থ থেকে যে সুদ পেতো তা জনকল্যাণকর কাজে ব্যয় করত। বৌদ্ধ ভিক্ষুক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকেও গিল্ড অর্থ দান করত।
- গিল্ডগুলি আধুনিক ব্যাংকের মতো মহাজনিক কারবার করত। সাধারণ মানুষের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য মানুষ তার সঞ্চিত অর্থ গিল্ডে সুদের বিনিময়ে জমা রাখতো। এভাবে আদি মধ্যযুগে গিল্ডগুলি অর্থনৈতিক ধর্মীয় ও সামাজিক কাজকর্মে অবদান রাখতো।
- একই ধরনের কার্যকর্ম ও বৃত্তিভিত্তিক গিল্ডগুলি সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করে চলত।
👉গিল্ড ব্যবস্থার অবক্ষয়
গুপ্ত যুগে গিল্ডগুলি সুসংগত ভাবে কার্য পরিচালনা করত। আদি মধ্যযুগের সেই ব্যবস্থার অবনতি ও অবক্ষয় ঘটে। ঐতিহাসিক ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায় ও রণবীর চক্রবর্তী বলেছেন যে, আদি মধ্যযুগের কোন একটি বৃত্তিতে নিযুক্ত সকল কারিগররা একটি সংগঠন রূপে আর ছিল না। গিল্ড বা শ্রেণিগুলি ক্রমে এক একটি পরিবারকে ভিত্তি করে গড়ে উঠতে থাকে সম্ভবত পরিবার গুলি একই বৃত্তিতে নিযুক্ত ছিল তার ফলে এই পেশার নানা সংগঠন ও একাধিক নেতার উদ্ভব ঘটতে দেখা যায়। এদিক দিয়ে বিচার করলে গিল্ডের ভাঙ্গনকে অস্বীকার করা যায় না। ঐতিহাসিক ভক্ত প্রসাদ মজুমদারের মতে আদি মধ্যযুগের ভূমিদান ব্যবস্থার ব্যাপকতা জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার ফলে ভূ স্বামীদের উত্থান ঘটায়। শ্রমিকদের একটি বড় অংশ কৃষি কাজে নিযুক্ত হয়, ফলে গিল্ড গঠনের শ্রমিকের অভাব ঘটে, ও গিল্ডগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে, সেই সঙ্গে গিল্ডগুলির ব্যাংক কোন ভূমিকা অনেকটা স্নাল হয়ে পড়ে।
📖 মূল্যায়ন
গুপ্ত যুগে ও তার পরবর্তী যুগে গিল্ড ব্যবস্থা যে রূপ সংঘটিত হয়েছিল এবং শক্ত হাতে কার্যকলাপ পরিচালনা করত আদি মধ্যযুগের তার অবক্ষয় ঘটে। আসলে আদি মধ্যযুগে শিল্প বা বাণিজ্য অর্থনীতির অবক্ষয় এবং আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন গিল্ডের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী ছিল। বিভিন্ন পুরান ও স্মৃতিশাস্ত গুলি গিল্ডের অবক্ষয়ের প্রমাণ তুলে ধরে।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"।
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"।
- V D Mahajan, "History of Medieval India".
📖সম্পর্কিত বিষয়
- মধ্যযুগীয় ভারতের ভক্তি আন্দোলনের উদ্ভব (আরও পড়ুন)।
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মনসবদারি ব্যবস্থা এবং পরবর্তীকালে জায়গির সংকট (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।