গুপ্ত শাসকরাই প্রথম ভারতীয় সম্রাট যারা বিভিন্ন ধাতু , যথা -- স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র -এই তিন ধরনের মুদ্রা চালু রেখেছিল। সর্বাধিক উল্লেখ্য যে, গুপ্ত সম্রাটদের স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে প্রচুর পরিমাণে। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত থেকে শুরু করে শেষ শাসক বিষ্ণুগুপ্ত পর্যন্ত সকলেই মুদ্রার প্রচলন অব্যাহত রেখেছিলেন। গুপ্ত যুগের প্রচলিত স্বর্ণ মুদ্রা "দিনার" নামে পরিচিত ছিল ।
"রোমের স্বর্ণমুদ্রা 'দিনারিয়াস "- এর অনুকরণে ভারতে গুপ্ত সম্রাটরা দিনার চালু করেছিলেন। গুপ্ত যুগে স্বর্ণমুদ্রার ওজন সব সময় একরকম ছিল না। ১১৮ গ্ৰেন থেকে শুরু করে ১৫১ গ্ৰেন পর্যন্ত স্বর্ণমুদ্রা গুপ্ত শাসকদের রাজত্বকাল প্রচলিত ছিল। স্কন্দগুপ্তের পরবর্তীকালে স্বর্ণমুদ্রার ওজন বৃদ্ধি পেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে খাদের পরিমাণও ক্সমশ বৃদ্ধি পায়। স্বর্ণ মুদ্রার খাদের পরিমাণের বৃদ্ধি থেকে অনুমান করা হয় যে স্কন্দগুপ্তের পর থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের ক্রমিক অবক্ষয় সূচিত হয়।
অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে স্কন্দগুপ্তের সময় পর্যন্ত স্বর্ণমুদ্রা প্রাচুর্য ওই সময়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে। স্বর্ণ মুদ্রা ছাড়াও গুপ্তযুগে রৌপ্য ও তাম্রমুদ্রা প্রচলিত ছিল। গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে প্রথম রৌপমুদ্রা প্রচলিত হয়। তিনি মালবের শক শাসকদের অনুকরণে এই মুদ্রা চালু করেন।
এ থেকে মনে করা হয়,শক বিজয় তাকে মুদ্রা চালুর বিষয়ে প্রভাবিত করেছিল। প্রথম কুমার গুপ্ত স্কন্দগুপ্ত ও পরবর্তীকালে বুধগুপ্ত রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন বোঝায় রেখেছিলেন। গুপ্তযুগে তাম্র মুদ্রার সংখ্যা ছিল খুব কম। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ১১টি তাম্রমুদ্রা পাওয়া গেছে কুমরহার এবং ১টি রাজগির-এ।
গুপ্ত যুগে আর -এক বিশেষ ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিল। সেটি হল নামমুদ্রা বা অভিজ্ঞান মুদ্রা। তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে শাসক, রাজকুমার, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী, ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলি ও বেসরকারি সংস্কার অভিজ্ঞান মুদ্রা প্রবর্তন করেছিল। গুপ্ত শাসকদের এই অভিজ্ঞান মুদ্রাগুলিতে শাসকদের বংশ তালিকায় বিশ্বস্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে।
বেসরকারি হলেও এমন বেশ কিছু শব্দ ওই অভিজ্ঞান মুদ্রগুলিতে উল্লেখিত হয়েছে, যেগুলি থেকে গুপ্ত যুগের মুদ্রা তথা সমকালীন সমাজ, অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা, দীক্ষা ও ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখক পরিচিতি
নাম- রাখাল বাউরী কলেজ - হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ ইউনিভার্সিটি - বর্ধমান ইউনিভার্সিটি ইমেইল ঠিকানা - kumarrakhal662@gmail.com |
👉তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"।
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"।
- V D Mahajan, "History of Medieval India".
📖সম্পর্কিত বিষয়
- মধ্যযুগীয় ভারতের ভক্তি আন্দোলনের উদ্ভব (আরও পড়ুন)।
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মনসবদারি ব্যবস্থা এবং পরবর্তীকালে জায়গির সংকট (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।