👉ভূমিকা:-
১৯৬০ এর দশকে কিউবারকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে কিউবার মার্কিন অনুগত বা তিস্তা সরকারের পতন এবং ফিদেল কাস্ত্রের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। এরপর কিউবার অর্থনৈতিক সংস্কারে কেন্দ্র করে কিউবার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরুদ্ধিতা সৃষ্টি হয়। এর ফলস্রুপ কেউবা ধীরে ধীরে রাশিয়ার কাছাকাছি চলে আসে।
কিউবার মানচিত্র |
ফিদেল কাস্ত্রো |
👉কাস্তকে উচ্ছেদের প্রচেষ্টা:-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো উপায়ে কিউবার কাস্ত সরকারকে ক্ষমতাচুত করার পরিকল্পনা করেন। এর ফলে মার্কিন ও কিউবার মধ্যে 1961 খ্রিস্টাব্দ "উপসাগরীয় যুদ্ধ" হয়। শেষ পর্যন্ত মার্জিন যুক্তরাষ্ট্রে এই অভিযানের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।
👉কিউবার আশঙ্কা:-
উপসাগরীয় যুদ্ধে ঘটনায় কিউবা মার্কিন চক্রান্ত সম্বন্ধে আশঙ্কিত হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় রাশিয়া কিউবাই ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ করার জন্য গাড়ার সিদ্ধান্ত নেই।
👉কিউবার সোভিয়েত ঘাঁটি স্থাপন:-
১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে এক চুক্তি অনুসারে রাশিয়া কিউবার আটচল্লিশটি মাঝারি ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ( IRBM) মিগ- ২১ ও ২৮ টি জেট আণবিক বোমারু বিমান সরবরাহ করেন। এছাড়া অক্টোবর মাসে আরো ৪২ টি ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়। এই ঘাঁটি স্থাপনের মধ্যে দিয়ে রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
👉কিউবার অবরোধ:-
সোভিয়েত রাশিয়া সম্পর্কে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র দুটি বিকল্পপক্ষ গ্রহণ করে। তা হল-
- (1) সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটি পথ ধ্বংস করা।
- (2) অস্ত্র বাহি সোভিয়েত জাহাজের গতিরোধ করা এরপর মার্কিন রাষ্ট্রের কেনেডি ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ২২ অক্টোবর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন আকাশ ও নৌপথে কিউবা অবরোধ করতে হবে।
👉রাশিয়ার প্রত্যস্তর:-
সোভিয়েত সরকার সেনাদের ছুটি বাতিল করে এমনকি সমস্ত স্তরে সেনা বাধ্যতামূলক ভাবে কাজে যোগ দিতে বলেন। আর যে সমস্ত কর্মচারী অবসর গ্রহনের সময় হয়ে এসেছিল তাদের সাময়িকভাবে অবসর গ্রহণ স্থগিত করে দেন।
👉রাষ্ট্র সংঘের উদ্যোগ:-
আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার সংকটময় পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংঘ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কারণ আমেরিকা ও রাশিয়া উভয়েই পরমাণু শক্তিধর দেশ। ফলে তৎকালীন রাষ্ট্র সংঘের মহা সচিব উন্থান উভয়পক্ষকে শাস্তি বজায় আহ্বান জানান।
👉কিউবার সংকটের অবসান:-
কেনেডি |
সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ক্রশচেভ চেয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডিকে জানান যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবা আক্রমণ করবে না। এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলেই রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি সরিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ২৭ অক্টোবর রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র অপসারণে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা অবরোধ প্রত্যাহার করে।
✍️গুরুত্ব:-
কিউবা সংকট স্বল্পস্থায়ী হলেও তা গুরুত্বহীন ছিল না। কারণ-
👉কিউবাই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা:- কিউবা সংকটকে কেন্দ্র করে কেউবা একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিণত হয়। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ফিদেল কাস্তে নিজেকে মার্কসবাদী বলে ঘোষণা করেন।
👉আণবিক যুদ্ধের ভয়াবহ উপলব্ধি:- এই সংকটকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসে।
👉আলাপ ও আলোচনার উপর গুরুত্ব দান:- এই সময় থেকে যুদ্ধের উদ্যোগ শুরু হয় । তাই দুই মহাশক্তিধর দেশ যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়াতে আলাপ আলোচনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল।
👉হট লাইন স্থাপন:- কিউবা সংকটের পরবর্তীকালে বিভিন্ন সংকটে সমাধানের উদ্দেশ্যে মস্কোর চক্রমলিন ও ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউস এর মধ্যে টেলিফোন সংযোগ (what line) স্থাপন করা।
👉পারমাণবিক পরীক্ষা নিরোধ চুক্তি স্বাক্ষর:- মূলত কিউবা সংকটের ভিত্তিতে পরের বছর সোভিয়েত রাশিয়া আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা নিরোধ চুক্তি 1963 খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত হয়।
✍️মূল্যায়ন:-
পরিশেষে বলা যায় যে, দুই মহা শক্তি রাষ্ট্রের শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ায় সর্বনাশ যুদ্ধের হাত থেকেই রক্ষা পায়। কিউবা সংকট মিটে যাওয়ার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও স্বস্তি ফিরে আসে।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉 তথ্যসূত্র
- Ghosh Peu, "International Relations".
- Carlos Alberto Montaner, "Fidel Castro and the Cuban Revolution: Age, Position, Character, Destiny, Personality, and Ambition".
👉সম্পর্কিত বিষয়
✍️সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏।