👉ভূমিকা
উনিশ শতকে ভারতে যে সমস্ত মহান ব্যক্তি আবির্ভূত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অনন্য নজির সৃষ্টি করে গেছেন। বর্তমান সময়ে তার শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক মূলক ভাবনা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি পিছিয়ে পড়া সমাজের অবক্ষয়ের হাত থেকে মুক্তি দিতে প্রয়াসী হন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর |
👉সমাজ সংস্কার
জাতির মধ্যে যে সমস্ত কুপ্রথা, কুসংস্কার যুগ যুগ ধরে বহমান ছিল তা দূরে করার জন্য বিদ্যাসাগর যে সমস্ত সংস্কার মূলক কাজ করেন তা হল-
👉বিধবা বিবাহ প্রচলন
তৎকালীন সময়ে সমাজে কোন যুবতী স্ত্রী মারা গেলে ও তাকে বাকি জীবন বিধবা অবস্থায় দুঃখে কষ্টে কাটাতে হতো। সমাজে এই নিষ্ঠুর প্রথার বিরুদ্ধেই তিনি আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাতে রক্ষণশীল হিন্দু নেতাদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও তিনি শেষ পর্যন্ত বিধবা বিবাহ আইনগত স্বীকৃতি লাভ করে ২৬ জুলাই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে।
👉বাল্যবিবাহের বিরোধিতা
তার সমকালে হিন্দু সমাজে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার ফলে তাদের অকাল বৈধব্য আসতো। তাই তিনি এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন ও আন্দোলনে সরব হন। এর ফলে সরকার পরবর্তীকালে মেয়েদের বিয়ের বয়স ধার্য করেন সর্বনিম্ন ১০ বছর।
👉বহুবিবাহের বিরোধিতা
হিন্দু সমাজে বিশেষ করে কুলীন ব্রাহ্মণীরা অর্থ ও লালসার মহে অনেক বিয়ে করতো এর ফলে সমাজে মেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তাই এই প্রথার বিরুদ্ধে তিনি ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের মহারাজের সহযোগিতায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে একটি প্রতিবাদ পত্র সরকারের কাছে পাঠান। কিন্তু মহাবিদ্রোহের জন্য এই সম্পর্কে কোন আইন প্রণয়ন সম্ভব হয়নি।
✍️অন্যান্য সংস্কার
তিনি সমাজের কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে সচেষ্ট হন। বিশেষ করে গঙ্গাসাগরে সন্তান নিক্ষেপ বা বিসর্জন, কুষ্ঠ রোগী হত্যা, অস্পৃশ্যতা, জাতিভে প্রথা ইত্যাদি। সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে জড়ালো প্রতিবাদ জানান।
1.👉শিক্ষা সংস্কার
বিদ্যাসাগর জাতির প্রকৃত শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে যে সমস্ত শিক্ষা বিষয়ক সংস্কার সাধন করেন তা হলো-
2.👉সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা সংস্কার
বিদ্যাসাগর ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। তারপর তিনি পাঠক্রম রচনায় মৌলিক প্রতিভার পরিচয় দেন। সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি শিক্ষা আবশ্যিক করেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচিত ঘটান।
3.👉বর্ণ বৈষম্য দূর
সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা করার সময় বিদ্যাসাগর লক্ষ্য করেন এই কলেজে একমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈশ্য ছাত্ররাই পড়াশোনা করতে পারত। এরকম পরিস্থিতিতে বিদ্যাসাগর যেকোনো হিন্দু শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত কলেজে অবাধে পঠন পাঠনের ব্যবস্থা করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মুক্ত ও বলিষ্ঠ মনের পরিচয় দিন।
4.👉গদ্য সাহিত্যের বিকাশ
বিদ্যাসাগরকে "বাংলা গদ" সাহিত্যের জনক বলা হয়ে থাকে। তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে অসংখ্য গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করে বাংলা গদ সাহিত্যের ভিতকে কে মজবুত করতে সচেষ্ট হন।
5.👉মাতৃভাষায় শিক্ষাদান
তিনি মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের মাধ্যমে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের উপযোগী গ্রন্থ রচনা করেন। যেমন- বর্ণপরিচয়, বর্ণমালা, বৈধদ্বয়, আখ্যা মজুরি, বেতাল, পঞ্চবিংক্ষতি ইত্যাদি।
6.👉আধুনিক শিক্ষার ভূমিকা
বিদ্যাসাগর মেয়েদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে 35 টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তার চিন্তা-চেতনা ও মনমানসিকতা ছিল পুরোপুরি আধুনিক। তাই শিক্ষার্থীদের যুগো প্রয়োগী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে সদা তাৎপর ছিলেন।
✍️মূল্যায়ন
পরিশেষে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রশংসিত হয়ে আছেন। আধুনিক ভারতের শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার তার অবদান শ্রদ্ধা ও সঙ্গে স্মরণ করি। তাই অমলেশ ত্রিপাঠি বিদ্যাসাগরকে "ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকীকরণ প্রবক্তা" বলে অভিহিত করেছেন।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉 তথ্যসূত্র
- সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশি থেকে পার্টিশন"
- Ishita Banerjee-Dube, "A History of Modern India".
✍️সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏।