১৮৩৯ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্য ইউরোপীয় শক্তিগুলি সহ আমেরিকা ও জাপান পর্যায়ক্রমে চীনের উপর নানা অজুহাত নানান এক পাশে চুক্তির শর্ত চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তি গুলি অসম চুক্তি।
চীনের মানচিত্র |
👉নানকিং এর চুক্তি
চিনের ইংরেজিরা আফিম ব্যবসায় দারুন লাভ করতে থাকে। ধীরে ধীরে চীনাদের মধ্যে আফিমের নেশা বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় চীনের মঞ্চ রাজা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং আফিম ব্যবস্থা বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এই অবস্থায় ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বণিক ও চীন সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ বাধে। যা ইতিহাসে প্রথম আইফেনের যুদ্ধ নামে খ্যাত। কিন্তু যুদ্ধে হেরে গিয়ে চীন ইংরেজদের সঙ্গে ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে নানকিং এর সন্ধি করতে বাধ্য হয়।
👉সন্ধির শর্ত
শর্তানুযায়ী চীন :-
- ইংরেজদের হাতে পাঁচটি বন্দর ক্যান্টন, আময়, সাংহাই, ফুচাও, নিম্পো তুলে দেই।
- কো-হং বণিকদের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে ইংরেজদের বাণিজ্য প্রথা বন্ধ হয়।
- হংকং বন্দর চিরকালের জন্য ইংরেজরা লাভ করে।
- এছাড়া অবাধে বাণিজ্য করার ক্ষতিপূরণ ও বাবদ বিপুল অর্থ ইংরেজি লাভ করে।
👉বগের চুক্তি
১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার চিনির উপর বগে চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তি দ্বারা-
- ব্রিটেন চীনের কাছে অতি রাষ্ট্র অধিকার লাভ করে। ফলে চিনে বসবাসকারী ব্রিটেশ নাগরিকদের ওপর চীনের আইন লুপ্ত হয়। তারা ব্রিটিশ আইন অনুসরণ করেন।
- অন্যান্য বিদেশি রাষ্ট্রগুলির মত ব্রিটেন ও সমান সুযোগ সুবিধা লাভ করে।
👉ওয়াং ঘিয়ার চুক্তি
১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে চীন আমেরিকার সঙ্গে "ওয়াং ঘিয়ার চুক্তি" করতে বাধ্য হয়। এই চুক্তি অনুসারে-
- আমেরিকা চীনে কিছু অতি রাষ্ট্রেরাষ্ট্রিক অধিকার লাভ করে।
- চীনের চুক্তি বন্দর গুলিতে বিদেশি নাগরিকদের আইনগত বিচার ও কর সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাধীনতা ভোগ করবে।
👉 হোয়ামপোয়ার চুক্তি
১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স চীনের ওপর "হোয়ামপোয়ার চুক্তি" বেশ কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয়। যেমন-
- পাঁচটি বন্দরে ফরাসি বণিকরা বাণিজ্য করার অধিকার পায়।
- ফরাসিরা চীনের কাছে অতি রাষ্ট্রের অধিকার পায়।
- চিন ফরাসি বণিকদের জন্য নির্দিষ্ট শুল্ক নির্ধারণ করে দেয়।
👉আইনগুণের সন্ধি
১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার চীনের ওপর আইনগুণের সন্ধির কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয়। শর্তানুযায়ী-
- উত্তরাখান্ডে বেশ কিছু অঞ্চলে রাশিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
- চীনের কিছু নদীতে যেমন-( আমুর/উসুরী) একমাত্র চীন ও রাশিয়া চলাচল স্বীকৃত হয়।
👉 তিয়েনসিন ও পিকিং এর সন্ধি:-
১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে নানান কারণে চীন ও ইংরেজদের মধ্যে দ্বিতীয় আইফনের যুদ্ধ শুরু হয় । আঠারোশো অন্যান্ন খ্রিস্টাব্দে এই যুদ্ধে নিষ্পত্তি হয় এই সন্ধির দ্বারা। সন্ধির শর্তগুলি নীচে দেওয়া হলো:-
- ইংরেজরা চীন সরকার তার থেকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ করেন।
- চীনে আরো ১১ টি বন্দর বিদেশিদের কাছে উন্মুক্ত হয়।
- চীনে রাজধানী পিকিং এ বিদেশী দূতাবাস খোলার স্বীকৃতি মেলে।
- চীনে বিদেশিদের কাছে অতি-রাত্রিক অধিকার দরজা খোলা হয়।
👉শিমনোসেকির সন্ধি
১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ার ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার লাভা কে কেন্দ্র করে চীন ও জাপানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধ চিনে পরাজিত হয় এবং সে জাপানের সঙ্গে "শিমনোসেকির" সন্ধি করতে বাধ্য হয়। সন্ধির শর্তগুলি নীচে দেওয়া হলো:-
- তিন কোরিয়ার স্বাধীনতা স্বীকার করে।
- জাপান চীনের কাছ থেকে লাভ করে পেসকডোর, তাইওয়ান, লিয়াং সুং, উপদ্বীপ ও পোর্ট ও আর্থার।
- চীনের কয়েকটি বন্দর জাপানের কাছে উন্মুক্ত হয়।
- এছাড়া জাপান ক্ষতিপূরণ বাদে প্রচুর অর্থ লাভ করে।
✍️মূল্যায়ন
পরিশেষে বলা যায় যে, এইভাবে বিদেশি শক্তিগুলি চীনের ওপর জোর করে অনেকগুলি চুক্তির শর্তের বোঝা চাপিয়ে দেয়। ক্রমে চীনের ভূখণ্ড বিদেশির কাছে খন্ড খন্ড আকারে বন্টিত হতে থাকে। এইজন্য ঐতিহাসিক হ্যারল্ড ভিনাকে এই ব্যবস্থাকে "চিনা তরমুজের খন্ডী করুন" বলে অভিহিত করেছেন।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉 তথ্যসূত্র
- অমিত ভট্টাচার্য, "চীনের রূপান্তরের ইতিহাস 1840-1969"
- Jonathan Fenby, "The Penguin History of Modern China".
✍️সম্পর্কিত বিষয়
✍️সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏।