মানুষ সভ্যতার ইতিহাসে "মিথ ও কিংবদন্তি" র গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকে দেব-দেবীর প্রভাব সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনী কাহিনীর অস্তিত্ব আজও বর্তমান। প্রতিটি পৌরাণিক কাহিনীতেই ঈশ্বর বা দেবতা, অপদেবতা, ভালো-মন্দ, দৈত্য চরিত্র রয়েছে। আর কিংবদন্তি কোন গল্প কথা নয় বরং তা কোন ঐতিহাসিক মানব চরিত্র বীর গাঁথা।
✍️মিথ:-
Myth কথাটি গ্রিক শব্দ "Mythos"থেকে এসেছে, এর অর্থ হলো শব্দ বা গল্প। এই মিথ বা পৌরাণিক কাহিনীতে খুব সুন্দর সুন্দর ঘটনার বর্ণনা করা হয়। আর এই ঘটনা কোন প্রমাণ দানের বাধ্য বাধ্যকতা থাকে না। তাই কখনো কখনো মনে হয় এই পৌরাণিক কাহিনীগুলি তথ্যহীন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা গল্প। এই পৌরাণিক কাহিনী একটি প্রতি কি বর্ণনা যা সাধারণত অজানা উৎস থেকে সৃষ্টি হয়ে কোন ঘটনার সঙ্গে ধর্মীয় ঘটনা যুক্ত হয়ে ধারাবাহিক ভাবে তার অস্তিত্ব বজায় রাখে। তবে এই কাহিনী আবার পূজা অর্চনা বা ধর্মীয় রীতিনীতি, ধর্মস্থান থেকে আলাদা ও হতে পারে। কোন এক সময়ে কোন দেবতা ও অতি মানবের সঙ্গে সেই সময়ের কোন অসাধারণ ঘটনা বা ঘটনার ধারাবাহিকতাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে "পৌরাণিক কাহিনী"। যেমন- হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী, মিশরীয় উপকথা, গ্রিক অতিকমা ইত্যাদি।
✍️ কিংবদন্তি:-
Legend কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ "Legenda" থেকে। এর অর্থ হল "পাঠযোগ্য বস্তু"। কিংবদন্তি মানুষের কার্যাবলীর বর্ণনা এর মধ্যে অতি নাটকীয়তা জাতীয় ঘটনা যুক্ত থাকে। ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রটেস্ট্যান্ট ঘন কোন ঘটনার গুরুত্ব বোঝাতে "কিংবদন্তি" কথাটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে জ্যাক গ্রিম পৌষ্টির গল্প গুলিকে কাব্যিক কিংবদন্তি পূর্ণ ও ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করেন। গ্রিমের এই উদাহরণকে কেন্দ্র করে 1967 খ্রিস্টাব্দে কিংবদন্তি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে অতীতের কোন স্থানের ঘটনার লোকমুখে প্রচলিত হলে এবং সেই অঞ্চলের মানুষ বংশ পরম পরাই মনে রেখে বিশ্বাস করে তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রচার করলে তাকে 'কিংবদন্তি" বলে। কিংবদন্তি প্রসঙ্গে ব্লুমসবেরী তার ইংরেজি অভিধানে বলেছেন কিংবদন্তি হল "এমন এক গল্প যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধীরে ধীরে উপস্থাপিত হয়েছে ইতিহাস রূপে, আসলে যা সত্য নয়"।
✍️উপকথা ও পুরা কাহিনীর ভূমিকা:-
অতীত বিষয়ের রূপদানে উপকথা ও পুরো কাহিনী মানুষের মধ্যে যে ধারণা গড়ে তোলে তা হল-
👉ঐতিহাসিক উপাদানের সূত্র:- উপকথা বা পুরা কাহিনী গুলি অনেকাংশে কল্পনা নির্ভর হলেও ওগুলি থেকে ঐতিহাসিক উপাদানের সূত্র পাওয়া যায়।
👉সময়কাল ও বংশ তালিকা:- উপকথা ও পুরা কাহিনীতে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনা তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর আনুমিক সময়কালে জানা যায়। এছাড়া রূপকথাও পৌরাণিক কাহিনী থেকে বিভিন্ন প্রাচীন রাজবংশের রাজাদের নাম ও শাসনকালে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়।
👉সমান সংস্কৃতি:- উপকথা ও পুরাণিক কাহিনী গুলি কল্পনা নির্ভর হলেও যে প্রেক্ষাপটকে কাহিনী গুলি রচিত হয়েছে তার আলোচনা থেকে সমকালীন সমাজ সংস্কৃতি সমাজকে জানা যায়।
👉বিশ্বজনীনতা:- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত পুরা কাহিনী এবং উপকথা থেকে বিশ্ব জননীতার আভাস পাওয়া যায়। বিশ্ব সৃষ্টি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রভৃতি ঘটনাবলীর আভাস ও এই কাহিনীগুলি প্রদান করে থাকে।
✍️মূল্যায়ন:-
সামগ্রিক আলোচনার নিরিখে বলা যায় যে, পুরা কাহিনী ও উপকথা গুলি কল্পকাহিনী নির্ভর হলেও প্রাচীন যুগের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পৌরাণিক কাহিনীও কিংবদন্তি থেকে আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉তথ্যসূত্র 📖
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
👉সম্পর্কিত বিষয় 📖
- সুলতান মুহাম্মদ ঘুরি (আরো পড়ুন)।
- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার (আরো পড়ুন)
- দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যায় (আরো পড়ুন)।
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)।
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏 ।
. ......................