১৯৪৬ সালে মুম্বাইয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীতে যে ব্যাপক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তা নৌ বিদ্রোহ নামে পরিচিত। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্যদের বিচারকে কেন্দ্র করে যে ব্যাপক গণ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তার প্রভাব পরে নৌ বাহিনীর উপর। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নতুন দিক নির্দেশ করেছিল এই বিদ্রোহ। নানান কারণে নৌ সেনাদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ উনজীবিত হয়েছিল।
✍️কারণ:-
১৯৪৬ সালে মুম্বাই বন্দরে তলোয়ার নামক জাহাজে ১৫০০ নাবিক অখাদ্য খাওয়ার খেতে অস্বীকার করে অন্বেষণ শুরু করে তারা নানা ভাবে বিদ্রোহ শুরু করে। এর নৈপথে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল-
👉নিম্নমানের খাবার:- ভারতীয় নৌ বাহিনীর অন্তর্গত ভারতীয় সেনাদের একই কাজে নিযুক্ত ইংরেজ সেনাদের থেকে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হতো এতে ভারতীয় নৌ সেনাদের স্বাভাবিকভাবে ফেটে পড়ে।
👉বেতন বৈষম্য:- ভারতীয় নাবিকেরা ইংরেজ নাবিকদের তুলনায় অনেক কম বেতন পেতো। শুধু তাই নয় বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে অযথা দেরি করত।
👉জাতি বিদ্বেষ:- নৌ সেনা বাহিনীতে জাতিগত বিদ্বেষের কারণে ইংরেজ নৌ অফিসারেরা ভারতীয় নৌ সেনাদের প্রতি অভদ্র ও অশালীন আচরণ করতো।
👉পদোন্নতি বৈষম্য:- ভারতীয় নৌ সেনাদের চাকরিতে পদোন্নতির কোন সুযোগ ছিল না অপর পাশে বৈষম্য মুলক ইংরেজ সেনাদের দ্রুত পদোন্নতি হত।
👉নিয়োগ বৈষম্য:- নতুন করে নো অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য সুবিধা করা হয়। সে ক্ষেত্রে নতুন ভাবে কোন ভারতীয়কে নৌ অফিসারকে পদে নিয়োগ করা হয় নি। এর ফলে নৌ সেনাদের জাতীয়তা বোধে প্রচন্ড আঘাত লাগে।
👉সেনাদের ফেরানোর দাবি:- ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সকল ভারতীয় নৌ সেনা পাঠানো হয়েছিল তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নৌ সেনারা বারবার দাবি জানাই।
👉ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব:- নৌ বাহিনীদের যে সকল কাজ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হতো সেই সকল কাজে ভারতীয় নৌ সেনাদের পাঠানো হতো ।
ব্রিটিশ সৈনিক |
✍️গুরুত্ব:-
ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্বে নৌ বিদ্রোহের অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সেগুলি হল:-
👉ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সংকট:- সিপাহী বিদ্রোহ প্রথম ও নৌ বিদ্রোহ শেষকালে মাতা ভারতীয় সেনারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিদ্রোহী হয়েছিল । তাতে তারা স্পষ্ট বুঝেছিল ভারতীয় নৌ সেনাদের ওপর ভরসা করে আর বেশিদিন রাজত্ব করা সম্ভব নয়।
👉ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত:- নৌ বিদ্রোহের জন্য ব্রিটিশ সরকার শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল।
👉ব্রিটিশ ভীতি দূর:- নৌ সেনাদের বিদ্রোহ সাধারণ মানুষের মন থেকে ব্রিটিশ ভীতি ঘটিয়েছেন।
👉বিরোচিত সংগ্রাম:- ঐতিহাসিক সুমির সরকার নৌ বিদ্রোহকে "বি রচিত সংগ্রাম" হিসেবে অভিহিত করেন অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও অনুরূপ মত প্রকাশ করেন।
✍️মূল্যায়ন:-
পরিশেষে উল্লেখ করা যায় যে, ভারতে স্বাধীনতা লাভের পরকালে শেষ উল্লেখযোগ্য সংগ্রাম। ঐতিহাসিক রজনী পাম দত্ত ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি গ্রন্থে বলেছেন, " নৌ বিদ্রোহের অবস্থান সাধারণ মানুষের সমর্থন এবং মুম্বাইয়ে শ্রমিক শ্রেণীর বিরোচিত সিদ্ধান্ত ও ভারতে নবযুগের সংকেত দেখা দিয়েছিল।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉 তথ্যসূত্র
- সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশি থেকে পার্টিশন"
- Ishita Banerjee-Dube, "A History of Modern India".
✍️সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏।