ভারতের স্বাধীনতার পূর্বে যে সমস্ত দুর্দশা দেখা দিয়েছিল তার মধ্যে সর্ব পেশা বিপর্যয় নেমে এসেছিল। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দুর্ভিক্ষে এই দুর্দশার বাংলার আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
Source - click here |
✍️কারণ
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল তার মুখ্য কারণগুলি হলো-
👉উৎপাদন হ্রাস:- পঞ্চাশের মন্বন্তরে বাংলায় ঘূর্ণিঝড়, জল স্রোত ও বন্যা, ধানের মোরক প্রভৃতি কারণে সব ধরনের শস্যের উৎপাদন কমাতে থাকে। এমনকি বন্যার কারণে সংরক্ষিত শস্য ও নষ্ট হয়।
👉রোগাক্রান্ত কৃষি:- কৃষি ক্ষেত্রে এক ধরনের রোগ ধান গাছ নষ্ট করে। এর ফলে প্রায় ৫০% থেকে ৯০% পর্যন্ত নানা ধরনের ধান নষ্ট হয়।
👉যুদ্ধকালীন অর্থনীতি:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা জাপানের হাতে আশায় বাংলায় চাল আমদানি বন্ধ হয়। আবার ভারতে জাপানের আক্রমণের ভয়ে সরকার ব্রিটিশ সেনাও ব্যবহারের জন্য মেদিনীপুর, ২৪ পরগনা, খুলনা, বাখর, গঞ্জ প্রভৃতি জেলা থেকে অতিরিক্ত ধান সরিয়ে নেই। ফলে কৃত্রিম খাদ্যের সংকট দেখা দেয়।
👉পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যয়:- জাপান ভারত আক্রমণ করলে ভারতে ব্রিটিশরা নদীপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় যার ফলস্বরূপ খাদ্য বা শস্য পরিবহনের খরচ বেঁচে যায়।
👉সরকারি খাদ্যনীতি:- বিভিন্ন রাজ্য ও আঞ্চলিক খাদ্য পাঠানোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিভিন্ন জায়গায় খাদ্যের অভাব ঘটেছিল যা কাল বাজারে বৃদ্ধি করে। ফলে বিভিন্ন খাদ্য সংসের দাম সীমাহীন বৃদ্ধি পায়।
👉সংশোধনবাদী মতামত:- অর্থনীতিবিদ অমর্ত সেন দেখিয়েছেন বাংলায় খাদ্যশস্যের কোন অভাব ছিল না। তিনি তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তুলনায় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে খাদ্যশস্যের যোগান ও সরবরাহ বেশি ছিল। পল গ্রিনো এর মতে, " বাংলার দূর্ভিক্ষ ছিল মনুষ্য সৃষ্টি এবং খাদ্যের যোগান ছিল অপর্যাপ্ত"।
✍️ফলাফল
পঞ্চাশের মন্বন্তরের ফল হয়েছিল কারন মর্মদ্দার্শি ও বেদনাদায় এর প্রভাবে আমাদের জনজীবনে যে প্রভাব পড়েছিল তা হল-
👉মানব সম্পদের অবক্ষয়:- এই মন্বন্তরে বাংলায় চূড়ান্ত মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। খাদ্যের অভাবে মানুষ না খেয়ে দিন কাটায়। খাদ্যে সন্ধানে তারা বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করে। ফলে বাংলার পারিবারিক ও সামাজিক জীবন ভেঙে পড়ে।
👉নৈতিক অবক্ষয়:- দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। খিদে মেটানোর জন্য তারা যেকোনো কাজ করতে বাধ্য হয়। দুর্ভিক্ষে মাথাপিছু খাদ্যের পরিমাণ কমে আসে তাই সমাজে নৈতিকতা হয়।
👉অর্থনৈতিক বিপর্যয়:- বাংলায় সকল শ্রেণীর মানুষের জীবনে নেমে আসে আর্থিক সংকট। জমানো সম্পদ খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। তাই অনেকে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়। এমনকি অনেকেই অসামাজিক কাজে যুক্ত হয়।
👉কমিউনিস্ট পার্টি জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি:- এই দল মহিলা সমিতির মাধ্যমে বাংলার বিভিন্ন গ্রামে মানুষের মধ্যে ত্রাণকার্য চালায়। এর মাধ্যমে দরিদ্র কৃষক সমাজে দ্রুত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
👉সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর প্রভাব:- সমসাময়িক কালে বিজন ভট্টাচার্য এর "নবান্ন নাটক"-র বাংলার এই মন্থর এর কথা চরমভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অশনি সংকেত উপন্যাসে পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায় নির্দেশিত অশনি সংকেত সিনেমাতে ও এই দুর্ভিক্ষের কথা জানা যায়।
✍️মূল্যায়ন
পরিশেষে সমস্ত আলোচনার নিরীক্ষে আমরা দেখি মন্বন্তরের পর সরকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য কমিশন গঠন করেন। কিন্তু এই কমিশনের রিপোর্ট হল পক্ষপাত দুষ্টি। এবং সরকারকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা পাশাপাশি বাংলায় ক্ষমতাশীল সরকারের অপদার্থ ও প্রমাণিত হয়।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉 তথ্যসূত্র
- সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশি থেকে পার্টিশন"
- Ishita Banerjee-Dube, "A History of Modern India".
✍️সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏।