মুঘল সম্রাট শেরশাহের রাজস্ব সংস্কার ও ভূমি ব্যবস্থা

মাত্র পাঁচ বছর ধরে মুঘল সম্রাট শেরশাহ রাজত্ব করেছিলেন। কিন্তু ভারতবর্ষে শাসনতান্ত্রিক বিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন  মুঘল সম্রাট শের শাহ এই স্বল্পকালের মধ্যে সামরিক ও শাসনতান্ত্রিক প্রতিভার সমন্বয়ে মুঘল সম্রাট শেরশাহ বিগ্ৰহে লিপ্ত থেকেও নব প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের শান্তিরক্ষা ও সুশাসনের উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। 

আলাউদ্দিন খলজির শাসন পদ্ধতির কিছু মূলনীতি অনুসরণ করেছিলেন মুঘল সম্রাট শেরশাহ। কিন্তু নিজস্ব উদ্ভাবন ছিল  মুঘল সম্রাট শেরশাহের বেশিরভাগ অধিকাংশ। কিছু মৌলিক নীতি গ্রহণ পূর্বক স্বীয় প্রতিভার দ্বারা প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতের হিন্দু ও মুসলমান শাসন পদ্ধতি গুলিকে আধুনিক রূপদান করেছিলেন মুঘল সম্রাট শেরশাহ। প্রাদেশিক সংস্কার ও ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার নতুন আনয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ কর্তৃত্বের দাবিদার ছিলেন মুঘল সম্রাট শেরশাহ। " কোন শাসকই এমন কি ব্রিটিশ সরকারও শাসনকার্যে মুঘল সম্রাট শেরশাহ ন্যায় পারদর্শিতা প্রদর্শন করেননি" এই মন্তব্যটির মূল্যায়ন করেছেন ব্রিটিশ কিনি।

মুঘল সম্রাট শেরশাহের রাজস্ব সংস্কার ও ভূমি ব্যবস্থা
মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র, Source- (check here


👉ভূমি জরিপ ব্যবস্থা 

ভারতের ইতিহাসে সার্বজনীন ভূমি জরিপের ব্যবস্থা মোগল সম্রাট শেরশাহ ই প্রথম ব্যবস্থা করেন। একই পরিমাপের ভিত্তিতে সমস্ত ভূমি জরিপের ব্যবস্থা রাজস্ব উন্নয়নের জন্য মোগল সম্রাট শেরশাহ করেন। ইতিপূর্বে কেউই মোগল সম্রাট শেরশাহের মতো জমি জরিপের ব্যবস্থাপনা করতে পারে না। মৌসুমী ভূমি জরিপ চালান ফসল উৎপাদনে মোগল সম্রাট শেরশাহ। রাজস্ব নির্ধারণ সহজ করা হয় কারণ ভূমি জরিপের মাধ্যমে আবাদি জমির পরিমাণ নির্ধারিত হয় মোগল সম্রাট শেরশাহ আমলে। সিকান্দার বিঘা ছিল পরিমাপের একক। 




👉ভূমির শ্রেণী বিভাজন 

মুঘল সম্রাট শেরশাহ আমাদের ভুলকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন উর্বরতা শক্তির ওপর নির্ভর করে এবং মোগল সম্রাট শেরশাহ রাজস্ব নির্ধারণের উৎপাদন স্তর অনুযায়ী নির্ধারণ করেন। তিন শ্রেণীর বিভক্ত অনুযায়ী শ্রেণিগুলি হল যথা  - উত্তম শ্রেণি, মধ্যম শ্রেণি এবং নিম্ন শ্রেণি।




👉ভূমির রাজস্ব নির্ধারণ 

রাজস্ব সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা রয়েছে আবুল ফজলের 'আইন - ই - আকবরিতে'। অভিনব ও মানবিকতার রাজস্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে মোগল সম্রাট শেরশাহ পরিচয় দিয়েছেন। বিগত কয়েক বছরের উৎপাদিত ফসলের গড় করে তার তিন ভাগের একভাগবিভিন্ন শ্রেণীর বিভিন্ন জমিতে মোগল সম্রাট শেরশাহ রাজস্ব নির্ধারণ করতেন। "প্রতি সিকান্দারী বিঘার ক্ষেত্রে রাজস্বের পরিমাণ বিভিন্ন রূপ ছিল" বলে ঐতিহাসিক মোর ল্যান্ডের মন্তব্য করেছেন। (১) ১৮ মন উত্তম শ্রেণী, (২) ১২ মন মাধ্যম শ্রেণী, (৩) ৮ মন থেকে ৩৫ সের নিম্ন শ্রেণী। 



👉মুঘল সাম্রাজ্যের রাজস্ব আদায় পদ্ধতি 

নগদ টাকা বা উৎপন্ন শসসের অনুপাতে মোগল সম্রাট শেরশাহের আমলে রাজস্ব দেওয়া হত। তবে নগদ অর্থের রাজস্ব প্রচলনশীল দ্রব্য খাজনার ক্ষেত্রে নেওয়া হতো। সরাসরি দরিদ্র কৃষকের কাছ থেকে এই রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে দরিদ্র কৃষকগণ মুক্তি পাই মধ্যস্থ ভোগী শ্রেণীর শোষণ থেকে। 




👉কবুলিয়ত ব্যবস্থা ও পাট্টা ব্যবস্থা 

মুঘল সম্রাট শেরশাহ আমলে কবুলিয়ত ব্যবস্থা ও পাট্টা ব্যবস্থা সর্বাধিক প্রচলন ও প্রসুদ্ধি ভূমি ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব সংস্কারের ক্ষেত্রে দুটি শব্দ। পাট্টা ব্যবস্থা ও কবুলীয়ত ব্যবস্থাশের শাহের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা। 

 



👉মুঘল সাম্রাজ্যের রাজস্ব আদায় পদ্ধতি 

নগদ টাকা বা উৎপন্ন শসসের অনুপাতে মুঘল সম্রাট শেরশাহের আমলে রাজস্ব দেওয়া হত। তবে নগদ অর্থের রাজস্ব প্রচলনশীল দ্রব্য খাজনার ক্ষেত্রে নেওয়া হতো। সরাসরি দরিদ্র কৃষকের কাছ থেকে এই রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলস্বর দরিদ্র কৃষকগণ মুক্তি পাই মধ্যস্থ ভোগী শ্রেণীর শোষণ থেকে। 




👉কবুলিয়ত ব্যবস্থা ও পাট্টা ব্যবস্থা 

মুঘল সম্রাট শেরশাহ আমলে কবুলিয়ত ব্যবস্থা ও পাট্টা ব্যবস্থা সর্বাধিক প্রচলন ও প্রসুদ্ধি ভূমি ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব সংস্কারের ক্ষেত্রে দুটি শব্দ। পাট্টা ব্যবস্থা ও কবুলীয়ত ব্যবস্থা মোগল সম্রাট শেরশাহ আমলে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার করে পরিবর্তন করেছিলেন। পাট্টা বলতে বোঝায়, কৃষকদের নাম জমিতে কৃষকের অধিকার ও রাজস্ব দেওয়ার পরিমাণ পুরো ভীতি সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রদত্ত দলিলে উল্লেখ করে লেখা হয় তা হল পাট্টা। কোন কৃষক ব্যক্তির জমির ভোগ বা ভাগ দখলের সরকারের স্বীকৃতির অধিকারী প্রমাণপত্র হল পাট্টা। পাট্টা পত্রের মধ্যে উল্লেখিত থাকতো, কৃষক বা প্রজার নাম, প্রজাতির বা কৃষকের জমির দাগ নম্বর, জমির স্বত্ব ও সরকারকে দেওয়ার রাজস্ব। যে সব দলিলে কৃষক বা প্রজাদের রাজস্ব দেওয়ার কথা কবুল করে সরকারের হাতে যে অঙ্গীকার পত্রের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হতো তাকে কবুলিয়াত পত্র বা কবুলিয়ত প্রথা বা কবুলিয়ত ব্যবস্থা বলে। এক কথায় কবুলিয়াত হল পাত্তা ব্যবস্থার শর্তগুলি মেনে নিয়ে প্রজাগণ যে সম্মতিপত্র দিতেন তাই হলো কবুলিয়ত। জমির মালিকানা ও জমিল দখলের প্রমাণ এই কবুলিয়ত ব্যবস্থার মাধ্যমে চাষিরা সুযোগ পেতো। 




👉মুঘল জমিদারি উচ্ছেদ

জমিদারি উচ্ছেদ করতে মুঘল সম্রাট শেরশাহ  চেয়েছিলেন। রায়তওয়ারি ব্যবস্থা কবুলিয়ত ব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে মোগল সম্রাট শেরশাহ  চেয়েছিলেন যেন মধ্যস্থ ভুগি জমিদারদের বিলুপ্তি ঘটতে পারে। কিন্তু তখন অনেক বড় বড় জমিদার বিদ্যমান থাকায় মোগল সম্রাট শেরশাহ সম্পূর্ণ সফল হতে পারেননি। 




👉কৃষকদের মাহসিলানা ও জরিবানা 

জরিমানা ও মাহসিলানা নামে আরো দুটি কর দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে আদায় করা হতো। এই জরিমানা ও মা ও শিলা না, উৎপাদিত ফসলে তিনভাগের এক অংশ নেওয়ার পরে এটি মোগল সম্রাট শেরশাহের আইন অনুসারে নেওয়া হতো। রাজস্ব আদায়কারি কর্মচারীদের বেতন হিসেবে মাহসিলানা এবং জমি জরিপ কর্মচারীদের জন্য ফিস হিসেবে জরিমানা আদায় করা হতো। 




👉মুঘল সম্রাট শেরশাহের রাজস্বের উৎস সমূহ 

 মুঘল সম্রাট শেরশাহের রাজস্ব উৎস সমূহ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। (১) কেন্দ্রীয়ভাবে রাজস্ব আদায়কিত উৎস এবং (২) স্থানীয়ভাবে রাজস্ব আদায়কৃত উচ্চ। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজস্ব আদায়কৃত উৎস হল - ওয়ারিশ বিহীন সম্পত্তি, বাণিজ্য শুল্ক, লবণ কর, আবগারি শুল্ক, জিজিয়া কর, খুমুস, উপহার, খারাজ, ভূমি রাজস্ব। এবং স্থানীয়ভাবে রাজস্ব আদাহয়কৃত উৎস হল - বাণিজ্য দ্রব্য, আমদানি ও রপ্তানি কারক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবীদের উপর আরোপিত কর। 




👉রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায় পদ্ধতি 

মুঘল সম্রাট শেরশাহ রাজস্ব নির্ধারণ ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একটি নীতি মেনে চলতেন। রাজস্ব আদায়ের খেতে কঠোরতা প্রদর্শন হলেও জমিতে রাজস্ব নির্ধারণের ব্যাপারে যথাসম্ভব উদারতা ও ছাড় দেওয়া হতো। প্রজা বা কৃষকদের ওপর নৃপিরণ ও অত্যাচার না করার জন্য মোগল সম্রাট শেরশাহ কর্মচারীদের প্রতি কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং অত্যন্ত পুঙ্খানু পুঙ্খভাবে রাজস্ব আদায় করা হতো। 




👉তাকাভী ও মওকুফ ঋন 

মুঘল সম্রাট শেরশাহ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের হানি ঘটলে এবং রাজস্ব নির্ধারণ থাকলেও সৈন্য পরিচালনা বা অন্য কোন দুর্যোগ হলে রাজস্ব মওকুফ করতেন এবং ক্ষতিপূরণ দিতেন। মোগল সম্রাট শেরশাহ অনেক দয়ালু ও সহনশীল ছিলেন। মোগল সম্রাট শেরশাহ কোন দুর্যোগ হলে বা দুর্যোগকালীন সময়ে কৃষক প্রজাদের জমির চাষের জন্য কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে বা জমি চাষাবাদ এর জন্য সুদমুক্ত কৃষি ঋণের তথা তাকাভী ঋন সরবরাহ কৃষকদের সুযোগ দিতেন। এতে বেশ উপকৃত হতো কৃষকগণ।




👉মুঘল শস্য ভান্ডার 

বিভিন্ন স্থানে সরকারি শস্য ভান্ডার স্থাপন করেন মুঘল সম্রাট শেরশাহ। মুঘল সম্রাট শেরশাহ বিঘা প্রতি অতিরিক্ত কর দুর্যোগের জন্য সেস হিসেবে আদায় করে মুঘল শস্য ভান্ডারে জমা রাখতেন। তাছাড় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আদায়কৃত রাজস্বের আড়াই অংশ জমা রাখতেন। যেকোনো দুর্যোগের সময় মোগল শস্য ভান্ডার থেকে প্রজাদের নাম অনুসারে মাত্রমূল্যের মধ্যে শস্য সরবরাহ করতেন। 




✍️মন্তব্য 

পরিশেষে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন যে, অনেক ঐতিহাসিক মুঘল সম্রাট আকবরের সমতুল্য বলে মুঘল সম্রাট শেরশাহের কর্তৃত্বকে অভিহিত করেন। তবে সর্বাংশে একথা সমর্থনযোগ্য নয়। মুঘল সম্রাট শেরশাহের মুঘল সম্রাট আকবরের মতোই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও আদর্শভিত্তিক উদারতা ছিল। অভিহিত করা হয় যে মধ্যযুগে ভারতের অন্যতম মহান শাসক হলেন মুঘল সম্রাট শের শাহ। মুঘল সম্রাট শের শাহ কৃষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল, কৃষকদের প্রতি যত্নশীল, উদার দৃষ্টিভঙ্গি জনগণের প্রতি ভালোবাসা ছিল বলে এই মন্তব্য প্রকাশ করেন অধ্যাপক জে এন চৌধুরী। তাছাড়া অক্লান্ত পরিশ্রমী, কর্তব্য ও নিষ্ঠাবান, নিরপেক্ষ বিচার বোধ এবং গঠনমূলক রাষ্ট্র প্রজ্ঞা প্রভৃতি ছিল মুঘল সম্রাট শের শাহ মধ্যে। মোগল সাম্রাজ্যের ভি ড় মূলত জনগণের ইচ্ছার ওপর গড়ে তোলেন মুঘল সম্রাট শের শাহ বলে মন্তব্য প্রকাশ করেছেন ঐতিহাসিক ডব্লিউ কুক। এবং ঐতিহাসিক ব্রিটিশ কীন মন্তব্য করে বলেছেন যে, মুঘল সম্রাট শের শাহের শাসন প্রতিভা ব্রিটিশদের থেকেও উজ্জ্বল ছিল।

............ সমাপ্তি...........


✍️লেখিকা পরিচিতি

Muntaha Yasmin
নাম- Muntaha Yasmin
ইউনিভার্সিটি - University of gour banga


📖তথ্যসূত্র

  1. Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
  2. Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".

    📖সম্পর্কিত বিষয়

    সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।

           ------------🙏---------------



    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐