" শিবাজীর সাফল্যকে স্থায়ীভাবে বিস্তৃতি দিয়ে ব্যাখ্যা করা উচিত নয় যে প্রতিকূল অবস্থার মাঝে তিনি রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ ও প্রতিষ্ঠাতা পেয়েছিলেন তার নিরীক্ষিতার কর্তৃত্বের মূল্যায়ন করা উচিত"
- ড.সরকা যদুনাথ সরকার
শিবাজীর জীবন শুরু হয়েছিল এক সামান্য জায়গীরদারদের ভাগ্যবিরম্বিত সন্তান হিসেবে। কৈশোরের তিনি পিতার স্নেহ ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু সহজাত প্রতি ভাবলে তিনি রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন এবং সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিচ্ছিন্ন ও অন্তরদ্বন্দ্বে লিপ্ত মারাঠা জাতিকে অবজ্ঞা ও অমর্যাদার জীবন থেকে ঐক্যবদ্ধ একটি জাতির মর্যাদায় ভূষিত করেন। তার এই কাজ তাকে ইতিহাসের স্থায়ী আসরে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
শিবাজীর সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল তার ব্যক্তিগত চরিত্র, সহজাত প্রতিভা ও সঠিক পরিকল্পনা। শিবাজী নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু তার চরিত্রে রাজকীয় গুণাবলীর অভাব ছিল না। তার জীবনধারা ছিল সম্পূর্ণভাবে নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা আবৃত। ধর্ম তারা দৃষ্টিতে ছিল আন্তরিকভাবে অনুসরণের বস্তু অন্যকে নিপীড়িত করার মাধ্যম নয়। জ্ঞানী গুণী ব্যক্তির প্রতি শিবাজীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল প্রশ্নহীন। কর্মক্ষেত্রে তিনি যোগ্যতা ও দক্ষতাকে মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত ছিলেন না। তার কর্মী পরিষদে হিন্দুরা যেমন গুরুত্ব পেতেন, মুসলমানরাও তেমনি দক্ষ ও বিশ্বস্ত হলে অবহেলিত থাকতেন না। শিবাজী বহু উচ্চ পদে মুসলমানদের নিয়োজিত করেছিলেন, যেমন -- মুনসি হায়দার, সিকি সম্বল, দৌলত খা নুর খা প্রমুখ। তার মুসলিম প্রজাদের ধর্মচরণের সুবিধার্থের শিবাজী রায়গর প্রাসাদের উল্টোদিকে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। শিবাজী মানব কল্যাণের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার নীতি স্থির করেছিলেন।
শিবাজী সাফলের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নিজের ক্ষমতার সীমা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতনতা। রাজনীতির বাস্তবতা সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ছিল অভ্রান্ত। নিজের মতোই অন্যের চরিত্র ও যোগ্যতা যাচাই করার অদ্ভুত দক্ষতা শিবাজীর করায়ত্ব ছিল। এই গুণের সাহায্যে তিনি সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে এমন কিছু দক্ষ মানুষের সম্বন্ধে ঘটান যারা নবগঠিত মারাঠা রাজ্যের সামরিক বাহিনী অসাধারণ প্রশাসকের অপ্রতিরোধ্য ও সচল করে তোলেন। শিবাজী কর্তৃমারাঠারা জাতির এহেন ব্যক্তিগত প্রতিভার বিকাশ শিবাজীর মৃত্যুর পরেও মারাঠাদের মুঘল বিরোধী সংগ্রামে প্রতিরোধ করে রেখে ছিলেন।বৃহৎ জমিদারির অবসান ও রায়তওয়ারির প্রথার প্রবর্তন করে তিনি কৃষক শ্রেণীর মধ্যস্থ ভোগীদের শোষণ থেকে রক্ষা করেন। শাসন ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ও গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন অব্যাহত রেখে শিবাজী রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে গতি ও কর্মদক্ষতার সমন্ধয় ঘটিয়েছিলেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল তার সহজাত সামরিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা। মাভাল উপজাতিদের সংগঠিত করে তিনি রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। সামরিক বাহিনীর মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলা বজায় রেখে এবং যুদ্ধকালেও বাহিনীর উচ্চ শৃঙ্খলা আচরণ নিয়ন্ত্রণে রেখে তিনি মহান সেনা নায়কের কর্তব্য পালন করেন।
রাজনৈতিক প্রতিভার অধিকারী হওয়া সত্বেও শিবাজী প্রতিষ্ঠিত মারাঠা রাজ্য স্থায়ী পাননি। এজন্য আংশিকভাবে শিবাজীর নীতিগত ভ্রান্তি এবং আংশিকভাবে সমকালীন পরিস্থিতিকে দায়ি করা যায়। শিবাজী মুসলমান বিরোধী সংগ্রামে কোনো না কোনোভাবে হিন্দুত্ববাদকে ব্যবহার করেন। ড. সরকার মনে করেন, শিবাজী কর্তৃক হিন্দু রাষ্ট্রে পরিকল্পনা হিন্দু সমাজ ও ধর্মের মধ্যে জাতিভেদ ও গ্রামের ভিত্তি সুদৃঢ় করেছিল। এবং শেষ পর্যন্ত এই ধর্মীয় ও সামাজিক ভেদাভেদ মারাঠা জাতিকে স্থায়ীভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে দেয়নি। কিংবা শিবাজি যে ঐক্য কায়েম করেছিলেন তাকে অতিরিক উচ্চবর্ণ ও নিম্ন বর্ণের সংঘাতে চুরমার করে দিয়েছিল। এছাড়া প্রতিবেশী রাজ্য থেকে জবরদস্তি মূলক "চৌথ ও সারদেশমুখী" আবার করে শিবাজী নিজের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করেন। মারাঠা অন্যায্য দাবির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিবেশী রাজ্যগুলি খুব এবং অন্তর দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও মারাঠাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার সম্ভাবনা মারাঠা রাষ্ট্রের স্থায়ী বিনষ্ট করেছিল।
............ সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
📖তথ্যসূত্র
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
📖সম্পর্কিত বিষয়
- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার (আরো পড়ুন)।
- দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যায় (আরো পড়ুন)।
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)।
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
------------🙏---------------